আলোচনা ১০৫
সমাজে নানা রকম প্রবাদ প্রচলিত থাকে, সব প্রবাদ বাক্য লিখিত থাকে না, কিছু কিছু প্রবাদ মুখে মুখে প্রচলিত থাকে শত শত বছর ধরে। সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি ‘খালি কলসি বাজে বেশী’, ‘ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম’ কিংবা ‘গেঞ্জির আবার বুক পকেট’ ইত্যাদি। কবি শ্রাবনী সিংহ অনেকটা সেরকম একটি প্রবাদ বাক্য দিয়েই তার কাব্যের শিরোনাম করেছেন “ফাঁকা ঘরের আভিজাত্য”। প্রবাদ বাক্য গুলো এমনি এমনি তৈরি হয় না, তার অনেক বাস্তব ভিত্তি থাকে। বাস্তবতার নিরিখে কেউ হয়তো একদিন তার পর্যবেক্ষণ,সমাজের কোন অসঙ্গতি কিংবা ব্যক্তি মানুষের আচরণকে তির্যক ভঙ্গীতে বলার জন্য অল্প শব্দে পুরো ঘটনা বলার চেষ্টা করেন আর সেখান থেকেই উদাহরণ সৃষ্টি হয় এবং জনে জনে তা ব্যবহার করতে করতে প্রবাদ বাক্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
বাস্তবে আমরা দেখি অনেকেই “পুরানো মডেলের গাড়ি কেনেন’, কয়েক বংশ ধরেই তারা বনেদি পরিবার এই আভিজাত্য প্রকাশ করার একটা গোপন ইচ্ছে থাকে মনে মনে যা নুতন মডেলের গাড়ী দ্বারা নব্য ধনীর তকমা থেকে মুক্ত থাকার একটা সহজ পথ। নিজের যতটুকু আছে তার চেয়ে বাড়িয়ে বলার, বাড়িয়ে প্রকাশ করার একটা সহজাত প্রবৃত্তি সব সময়ই দেখা যায় এবং সেটা অর্থনৈতিক বিবেচনার ক্ষেত্রে বেশী প্রকট দেখা যায় । কবি কিছু মানুষের অহেতুক ঔদ্ধত্য কে নানা শব্দ (পরচুলা,বাঁদরটুপি) দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন, পরচুল পড়ে তার চুলের সৌন্দর্য প্রকাশ একটি বাস্তব উদাহরন।
বিপরীতে নিজের স্বপ্ন, শঙ্কা, অনটন অনুতে থাকার পরও সেটাই নিজের পৃথিবী, সেটাই অনন্য, সেটাতেই গর্ব, সেটাই প্রত্যেকের নিজের গর্ব। কিন্তু অহেতুক কৃত্তিম উপাদান দ্বারা নিজের আভিজাত্য প্রকাশে দিনের শেষে দৈন্যতাই প্রকাশ পায়। কবি অল্প কথায়, একেবারেই শব্দের অপচয় না করে সমাজের প্রচলিত কিছু অভ্যেস, তার বিপরীতে সত্যিকারের কি হওয়া দরকার এবং কেন, তা অকপটে তুলে ধরেছেন খুব স্বল্প পরিসরে। কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।