আলোচনা ১৭০
দুটো বিষয়কে/ইস্যুকে একত্রিক করে কাব্য “তখনও দুঃখ আমাকে স্পর্শ করেনি, কবি মুহাম্মদ নুর ইসলাম। কবিতাটি পড়তে পড়তে খুব আবেগ তাড়িত হয়ে পরেছিলাম, দুটো ইস্যুই আমার নিজের জীবন ঘনিষ্ট, ফলে কবিতার সাথে চোখের সামনে ছবি ভেসে আসছিলো। কবি, সাহিত্যিকদের কাজের সার্থকতা এখানেই যদি তার সৃষ্টি দিয়ে পাঠককে আবেগ তাড়িত করতে পারেন কিংবা ইস্যুর সাথে একাত্ম করতে পারেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নিজে উপস্থিত না থেকেও মানুষকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন, সে কারনে আমরা দেখি শিল্পপতি কিংবা তার স্ত্রী যদি রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হয় তাহলে তার চাল চলন এক রকম কিন্তু শিল্প সাহিত্যের সাথে সংযোগ নেই এমন শিল্পপতি কিংবা তার পরিবারের অন্য কেউ, তাদের জীবনবোধ ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ কেবল তার “রবীন্দ্রসঙ্গীত” দিয়েই মানুষের ভেতরে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে্ন (নোটঃ আমি নিজে রবীন্দ্র ভক্ত বলেই হয়তো পুরো বিষয়টাকে এভাবেই ভাবী, রাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনি না, এমন দিন খুব কমই আছে, অন্যরা ভিন্নভাবে ভাবতে পারেন)
আলোচ্য কাব্যে কবি, দুঃখ এ্নং মায়ের কাছে আশ্রয়, দুটো বিষয়ের এতো চমৎকার সংযোগ ঘটিয়েছেন, সে কারনেই বোধ হয় একটু বেশী আবেগ তাড়িত হবে পাঠক। মা” নিয়ে অসাধারন সব গান আছে-
১। আমাদের ব্যান্ড সংগীতের বিখ্যাত শিল্পী জেমস এর “মা”-দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারন….........
২। ভারতের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী- অরজিত সিং এর গান মা’কে নিয়ে-
তুমি নরম ফুলের গান
তুমি গরম ভাতের ভাপ
তুমি অভিমানের চুপ
তুমি কান্না জমা মুখ
আমি তোমার ছায়ায় ছায়ায় থাকি মা
আমি তোমার চোখের তারায় বাঁচি মা
আমি তোমার মায়ায় মায়ায় থাকি মা
আমি তোমায় হাওয়ায় আবার ডাকি মা
আমি তোমায় ভালোবাসায় মুড়ে রাখি মা
৩। মান্নাদের গান সেই ছোট বেলা থেকেই শুনছি, মা’ নিয়ে তার বিখ্যাত একটি গান
যখন এমন হয়
জীবনটা মনে হয় ব্যর্থ আবর্জনা
ভাবি, গঙ্গায় ঝাপ দেই
রেলের লাইনে মাথা রাখি
কে যেন হঠাৎ বলে
আমি তো আছি
বললি টা কি
মা আ গো, সে কি তুমি
সে কি তুমি......
গানগুলো এমনভাবে হৃদয় ছুঁয়ে যায় যে, শতবার, হাজার বার শুনি তারপরও প্রান ভরে না। মনে হয়, আবার শুনি, আবার, আবার......
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই “মা” এক ভিন্ন জায়গা দখল করে থাকে। মা’ নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি আছে, মায়ের দোয়ায় অনেক ব্যক্তিদের সফলতার কাহিনী আমরা জানি। ম্যাক্সিম গোর্কির স্মরনকালের বিখ্যাত বই “মা”। এখানে কবি সে কথাই পুনর্বার বলেছেন-
সেই ছোটবেলা থাকেই মায়ের আশ্রয়ে থাকার কারনে কোন প্রকার দুঃখ আমায় স্পর্শ করতে পারেনি। যখন দাড়াতে শিখিনি, কথা বলতে শিখিনি, নিজের ক্ষুধার কথা বলতে শিখিনি কিন্তু মা, সবই জানতো, মায়ের পরম মমতায়, আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে কোন প্রকার জ্বালা যন্ত্রনা, দুঃখ আমায় স্পর্শ করতে পারেনি। একবারেই মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ে আমার শিশুকাল কেটেছে, আমার ছোটবেলা কেটেছে। কিন্তু তারপর কি মায়ের আশ্রয় শেষ??
মায়ের আশ্রয় কোনদিন শেষ হবার নয়। আমরা নিজেরা বয়সে যত বড়ই হই না কেন, মায়ের আশ্রয় আমাদের সারাজীবনের, সার্বক্ষনিক, মায়ের আশ্রয় ছাড়া আমাদের চলেই না। কবি আবার বলেন-
যখন বিবেক-বুদ্ধি বোধ ছিলো না কিছু, যখন পাগলের মতো ছুটতাম মা'র পিছু পিছু, যখন চোখজোড়া ছিলো নিষ্পাপ- পবিত্র;
কবিতাটি শেষ করেছেন একটি জোড়ালো স্ট্যাট্মেন্ট দিয়ে-
আমি কসম খেয়ে বলছি সত্যি, দিব্যি সত্যি-
তখনও দুঃখ আমাকে স্পর্শ করেনি।
কবির প্রতি রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা, দারুন এক কাব্য উপহার দেয়ার জন্য।