আলোচনা ৮৫
যুগান্তকারী একটি মন্তব্য দিয়ে কবি শেষ করেছেন, “মানুষের মাঝে থেকেও এতোদিন বুঝে উঠতে পারিনি মানুষের ভাষা” এবং শেষ লাইনেই লুখিয়ে আছে কবিতার মুল বক্তব্য। কবি শাহরিয়ার শুভ বেশ রূপকতার মাধ্যেমে উপহার দিলেন অসাধারণ এক কাব্য “একটি অন্যমনস্ক গাছ”। মানব চরিত্রের অবক্ষয়ের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে এই কবিতায়।
মানব চরিত্রকে এখন আর বিশ্বাস করা যায় না, মানুষকে এখন আর প্রিডিকট করা যায় না। কখন যে কি করবে, কখন যে তার ভয়ংকর রূপ নিয়ে যমদূত হবে, কখন যে উপকারীর প্রতি হিংস্র হয়ে উঠবে তা কোনভাবেই অনুমান করার সুযোগ নেই। কবিতাটিতে “অন্যমনস্ক গাছ’কে আক্ষরিক অর্থে গাছ ভেবেও কবিতার বক্তব্য বোঝা যায়, যে গাছ মানুষকে সার্বক্ষণিক উপকার করে যাচ্ছে, মানুষের নিঃশ্বাসের অক্সিজেন উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা পর্যন্ত মানুষকে প্রতিনিয়ত ছায়ার মত উপকার করে যাচ্ছে, সেই গাছকেই মানুষ নির্বিচারে কেটে যাচ্ছে, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে যাচ্ছে। তাই কবি লিখেছেন- “টের পাইনি মানুষ- যাদেরকে দিয়েছিলাম পিতার ছায়া, মাতৃদুগ্ধের মতো বায়ু, যাদের জন্য যুগিয়েছি খাবার, বুঝতে পারিনি মানুষ- যাদের জন্য লড়ে গ্যাছি ঝড়েদের সাথে, এভাবে আমাকে নির্বিকার শেকড়হীন কোরে দেবে, ভাবিনি কখনো”
আবার গাছকে রূপক অর্থে ব্যবহার করেও আমরা কবিতার মর্মার্থ বুঝতে পারি। মানুষ উপকারীর প্রতি কতটা অকৃতজ্ঞ হলে পরে, উপকারীর ঋণ শোধের পরিবর্তে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কিভাবে হিংস্র হয়ে উঠে। অসহায় মানুষ যার/যাদের উপর নির্ভর করে, ভরসার আশ্রয়স্থল খোঁজে, তারাই হয়ে ওঠে মৃত্যুর যমদূত, প্রবাদে বলে “রক্ষক ভয়ে যায় ভক্ষক”, আমারা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এরকম অসংখ্য উদাহরণের সম্মুখীন হই। তাই কবি লিখেছেন- “যাকে ভেবেছিলাম রোগ সারাবার ডাক্তার, এভাবে আমাকে কেটে ফেলবে- বুঝিনি"
কবিতার মুল বক্তব্য, মানুষের অমানবিক চরিত্রের মুখোশ উন্মোচন, প্রকৃতির সাথে মানুষের অন্যায়ের মুখোশ উন্মোচন, মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায় আচরণের মুখোশ উন্মোচন। অল্প কথায় অনেক বড় ব্যাপ্তির বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো ।