আলোচনা ২৯
একা থাকা এবং নিঃসঙ্গ থাকা প্রত্যয় দুটি দিয়ে কবিতা শুরু করেছেন কবি শহীদ উদ্দীন আহমেদ তার “একা থাকতে চাই” কাব্য। কবিদের ভাবনায় কত কিছুই না ধরা পরে যা সাধারণভাবে ভাবনায় আসে না। কবি যখন তার কবিতায় খুব সূক্ষ্ম কোন বিষয় অবতারনা করেন, কেবল তখনই পাঠকের ভাবনা শানিত হয়, পাঠক নুতন করে ভাবতে শুরু করে। আলোচ্য কবিতাটিও তেমনি ভাবে শুরু করেছেন কবি।
একা থাকা এবং নিঃসঙ্গ থাকার মধ্যে রেজাল্ট এক হলেও যোজন যোজন পার্থক্য দেখিয়েছেন কবি। একা থাকা মানে কখনই কেউ ছিল না, বাস্তবে ছিল না, কল্পনায়ও ছিল না ফলে না থাকার অনুভূতি ছিল না, হারাবার কষ্ট ছিল না, বিরহ যন্ত্রণা ছিল না, প্রবঞ্চিত হবার ভয়ও ছিল না। অন্যদিকে, নিঃসঙ্গ থাকা মানে, কেউ একজন ছিল কিন্তু এখন নেই কিংবা থাকার কথা ছিল কিন্তু নেই ফলে নিঃসঙ্গতা কষ্ট দেয়, দুঃখ স্মৃতি বারবার কাঁদায়, ছলনার কথা ভেবে, প্রবঞ্চিত হবার কথা ভেবে কষ্টে চোখে জল আসে। তাই কবি, সিন্ধান্ত দিয়েছেন, নিঃসঙ্গ থাকার চেয়ে একা থাকা অনেক ভাল। ভুক্তভোগী না হলে হয়তো সিদ্ধান্ত অন্যরকম হতো।
কবি বলতে চেয়েছেন, শুদ্ধ ভালবাসায় ভাল-মন্দ, আশা-নিরাশা, সুখ-দুখ সবই থাকে, ভালবাসা হয় নিঃস্বার্থ কিন্তু কবি তার অভিজ্ঞতায় বলেছেন “ভালবাসায় চলে শুধু স্বার্থের বেচা কেনা” ফলে ‘প্রেমে পড়লে সইতে হয় বিরহ যন্ত্রণা’, আবার “ কাছের মানুষ রয়না কাছে সুখ না যদি পায়, দুঃখ বিনা সুখ লাভ সবাই পেতে চায়”। কবি ভালবাসায় আর আস্থা রাখতে পারেন না। সবাই সামগ্রিক ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় না কেবল আংশিক ভাবে, নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সুখই পাতে চায়, যা কোনভাবেই ভালবাসা হতে পারে না । তাই কবি অনেক দুঃখ ভরা মনে শেষ কথা বলেছেন “একা আছি ভালই আছি, একাই থাকতে চাই, নির্জনতার মাঝে আমি নিজেকে খুজে পাই”। কবির জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা।