আলোচনা ১৪০
অর্থহীন শব্দগুলোও কখনো
জীবনকে অর্থময় করে তোলে
সব সময় অর্থ খুঁজতে গেলে, কিছুই থাকে না
জীবন অর্থহীন হয়ে যায়
সব শব্দের আক্ষরিক অর্থ খুঁজতে গেলে তার কোন অর্থই খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক শব্দেরই দুটো অর্থ থাকে, একটা আক্ষরিক অন্যটি নিহিত অর্থ। কবি মোঃ নুরুন্নবী “একা” কবিতায় আক্ষরিক অর্থ এড়িয়ে নিহিত অর্থ নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন। কবিতায় আক্ষরিক অর্থ খুঁজতে চাওয়া বৃথা চেষ্টা এবং কবিতার অন্তর্নিহিত ভাব হারিয়ে যায়। কবিতায় সব সময়ই অন্তর্নিহিত অর্থ লুকিয়ে থাকে।
কবিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, আমি একা থেকে শুরু করে সবই (চাঁদ, আকাশ, চিল, চিলেকোঠা, রাত্রী, যাত্রী, নদী, ফুল, বেলকনি, ইজিচেয়ার, পথ, বাড়ী, হিসেবের খাতা) একা বলা হয়েছে। আক্ষরিক অর্থে কোনটাই একা হয় না বা থাকে না। মানুষের জন্ম এবং মৃত্যুই কেবল একা হয়, বাকী সময়টা মানুষ কখনোই একা হয় না কিন্তু কবি বলেছেন “আমি একা”।
মূলত “একা” শব্দটি একটি দর্শনকে ইঙ্গিত করে। একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নাতাবোধ ইত্যাদি শব্দগুলো সবই একটি অন্যটি থেকে আলাদা কিন্তু দর্শনগত দিক থেকে অনেকটা একই অর্থ বহন করে। মানুষের ভেতরে একটা একাকীত্ববোধ সব সময়ই কাজ করে, অনেক মানুষের মাঝে থেকেও মানুষ একা হতে পারে। কেউ কেউ অনেক বেশী “একা থাকে” আবার কেউবা কম কিন্তু মানুষ মূলত “একাই”, বাহিরে অনেক মানুষের সাথে বসবাস করে, অনেক মানুষের ভীড়ে সময় পার করে কিন্তু দিন শেষে সে “একা”। সে চিন্তায়, ভাবনায়, মননে……অন্য সবার থেকে ভিন্ন, সব মানুষই এক একজন ভিন্ন সত্তা, সামাজিকতার কারনে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা নিজেকে একা ভাবি না, ভাবতে চাই না কিন্তু মূলত মানুষ “একাই”।
একইভাবে কবি, বস্তুগত বিষয়ের মধ্যেও একাকীত্ব দেখতে পেয়েছে, অন্যান্য প্রানীর মধ্যেও একাকীত্ব দেখতে পেয়েছেন। বিষয়টা হাস্যকর হতে পারে, ইজিচেয়ার কিংবা চাঁদ আবার “একা’ হয় কি করে কিন্তু “একাকীত্বের” অস্তিত্বকে, একাকীত্বের যন্ত্রনাকে, একাকীত্বের রূঢ় রূপকে নানা রূপকের মাধ্যে্মে প্রকাশ করেছেন।
কবিতাটি আমার দারুন লেগেছে, চিন্তার জগতে একটা ঝংকার তুলে, একটা ভিন্ন ভাবনার জগতে নিয়ে যায়, অন্তত কিছুক্ষনের জন্য হলেও পাঠক দার্শনিক হয়ে ওঠে।
কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা