আলোচনা ১১৩
নীরবতা নিজেই একটি ভাষা। কবি পারমিতা ৫৮ (অনুরাধা) তার কাব্য ‘এবং নীরবতা’তেঁ নুতন ভাবে একটি ভাষা আবিষ্কার করলেন, প্রমাণ করলেন অসাধারণ এক ব্যঞ্জনায়। নানান দেশের নানান ভাষা দিয়ে মানুষ নানাভাবে তার আনন্দ, বেদনা, কান্না, হাসি, উল্লাসের মত সকল অনুভুতিতে প্রকাশ করে থেকে। অনুভূতি প্রকাশের এই মাধ্যম ‘ভাষা’ সার্বজনীন নয়, যে কারনে এক ভাষার মানুষ অন্য ভাষায় প্রকাশিত অনুভূতিগুলোকে তার মত করে বুঝতে পারে না, অনুভব করতে পারে না। কিন্তু ‘নীরবতার ভাষা’ সার্বজনীন। দেশ কাল জাতি ভেদে নির্বিশেষে সবাই বুঝতে পারে কিন্তু তার অন্য প্রয়োজন হৃদয়ের প্রগাঢ় অনুভব (প্রবীরচ্যাটার্জী এর মন্তব্য), নীরবতা বোধগম্যের জন্য দরকার সঠিক মন (নাসিরউদ্দিন তরফদা এর মন্তব্য)।
কবিতার শিরোনাম আমাকে খুব আকর্ষিত করেছে, শিরোনাম যদি শুধু “নীরবতা’ হত, তাহলে হয়ত কবিতাটি চোখ এড়িয়ে যেত , নীরবতার আগে ‘এবং’ যোগ করে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন কবি, পাঠকের মনে একটি ভিন্ন মোহ তৈরি করেছেন। এবং আর আগে তাহলে কি, নীরবতার আগে কি থাকতে পারে ইত্যাদি শুরুতেই একটা আগ্রহ, একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, পাঠককে উদ্বুদ্ধ করেছে কবিতার ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। এখানেই কবি’র দক্ষতা এবং কৃতিত্ব । শুধুমাত্র কবিতার একটি শিরোনাম অনেক কথা বলতে পারে।
কবিতায় ব্যবহৃত কিছু রূপক “আমি শুনেছি লাঙলের ফলার কথা, মাটির কাছাকাছি। শুনেছি হাতুড়ির কলরব কামারের বাহুবলে” কবিতাকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে। পাঠক খুব সহজেই কানেক্ট করতে পারছে ‘নীরবতা’ শব্দটি । আমাকে সবচেয়ে বেশী মোহবিস্ট করেছে শেষের দুটি লাইন-
আমি শুনেছি লাঙলের ফলার কথা, মাটির কাছাকাছি।
শুনেছি হাতুড়ির কলরব কামারের বাহুবলে।
চমৎকার একটি কাব্য উপহার দেয়ার জন্য কবির জন্য রইলো অশেষ শুভেচ্ছা।