আলোচনা ৯০
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশীর ভাগ মানুষের জীবনেই দেখি প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ব্যবধান। কবিতায় সারাক্ষন ফুটে উঠে হতাশা, বিরহ, না পাওয়ার বেদনা... চারদিকে শুধু অপ্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি। প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তি দুটো’রই কোন সার্বজনীন সংজ্ঞা নেই, আপেক্ষিকতার কাঠামোতে বাঁধা সব, দেশ কাল পাত্র কিংবা সময়ের হেরফের হলে জায়গা বদল হয় প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তির। কেউ কেউ আবার বাহ্যিক প্রকাশে সন্তুষ্ট কিন্ত ভেতর অপ্রাপ্তির অনলে পোড়ে। এরকম এক প্রেক্ষাপটে কবি আগুন নদী তার কাব্য প্রকাশ করেছেন “দৃপ্ত আমার তৃপ্ত হৃদয়”। কবিতার ব্যকরনে আমি খুব একটা মনোযোগী হতে পারি না, আমার নিজের কবিতা লেখায় এবং কবিতা পড়া কিংবা কবিতা আলোচনা করার ক্ষেত্রে ‘বক্তব্য নির্ভরতা’ প্রাধান্য পায়। এ কবিতাটিও আলোচ্য প্রেক্ষাপটে ভিন্নধর্মী বক্তব্য নিয়ে এসেছে।
কবিতার প্রতি লাইনে লাইনে প্রাপ্তি এবং চূড়ান্ত সন্তুষ্টির প্রকাশ দেখা যায়, “ পেয়েছি তেমনি তাই মধুর ভরতি পথে মুগ্ধ নিখাদ জীবন, আর কোন সাধ নেই বাকি!” । জীবনের পূর্ণ সন্তুষ্টি নিয়েই সামনে এগিয়ে যাবার আস্থা ব্যক্ত করেন, “এই কথা বলে শুধু সামনেই যেতে চাই, একা নয় সাহসিক অবিচল থাকি,-নীরব প্রস্থান খুঁজে সরব সুফল পাই”।
কতটা সন্তুষ্টি থাকলে পরে বলা যায়, “স্বপ্নের চেয়ে বেশি; প্রত্যাশারও অধিক”, “প্রয়োজনে আয়োজনে;প্রাপ্তির পাল্লা ভারী, না চাইতে পেয়ে গেছি সুন্দর সঠিক, হাসিমাখা সুখ যতো,শান্তি সারি সারি, শুদ্ধ যাপনের প্রথা সুস্থ সবলতা”। এক জীবনে যতটা চাওয়ার থাকে, পাওয়ার ইচ্ছে থাকে, সবটাই পাওয়া হয়ে গেছে, বাকী পাওনাটুকু বোনাস, তার অন্য কিছু চেষ্টাতো থাকবেই ।
ইহকালের পর, এবার পরকালের প্রাপ্তির হিসেব নিকেশ, আদৌ উতরানো যাবে কিনা পরকালের বিচারের কাঠগড়া! কবি এখানেও প্রত্যাশা রেখেছেন, সেখানেও প্রাপ্তির চূড়ান্তটাই পাবে, অদৃষ্টের প্রতি এমন আস্থাই ব্যক্ত করেছেন। কবিতাটি পড়ার পর পাঠকের মনে আমার মতই কিছু প্রশ্নের জন্মও দিতে পারে- চূড়ান্ত সন্তুষ্টি অর্জন হয়ে গেলে মানুষের আর পক্ষে আর বেঁচে থাকা সম্ভব কিনা? এতটা সন্তুষ্টি অর্জন, বাস্তবতার কতটা কাছাকাছি?
কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো, ভিন্ন ধর্মী একটি কবিতা উপহার দেয়ার জন্য।