আলোচনা ১২১
অর্থনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসের তলানিতে থাকা এক পরিবারের চিরাচরিত চিত্র অঙ্কন করেছেন কবি গোলাম রহমান তার কাব্য ‘ছোট্ট নিশ্বাস’ এর মাধ্যমে। চিরাচরিত শব্দটি ব্যবহার করেছি ইচ্ছে করেই কেননা সাধারণ মানুষ কবিতার প্রতিপাদ্য বিষয় দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলবে ‘এ আর নুতন কি’ কিন্তু কবি গোলাম রহমান সাধারন বিষয়ের মধ্যেই অসাধারণ পর্যবেক্ষণ রচনা করেছেন ফলে চিরাচরিত বিষয়ই কাব্যগুনে এবং গভীর অনুভুতিতে লালিত জীবন বোধের কারনে তা অসাধারন হয়ে উঠেছে ।
আমরা জ্ঞানী গুণীজন দারিদ্র্যতার সাথে মানুষের জীবনের অত্যন্ত অঙ্গাঅঙ্গিভাবে সম্পর্কিত দুটো অনুষঙ্গকে নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি এবং নানাভাবে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ যুক্তি উপস্থাপন করে থাকি। সুখের সাথে এবং ভালবাসার সাথে দারিদ্র্যতার পজেতিভ এবং নেগেটিভ সম্পর্ক, এ নিয়ে নানাজনের নানা ধরনের বিশ্লেষণ আছে কিন্তু এখানে কবি দারিদ্র্যতার মধ্যেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার মধুর সম্পর্ক নিজেদেরর প্রতিদিনের জিইয়ে রাখা প্রেম এবং দিন শেষে ক্লান্ত দেহ ও মনে তার বহিঃপ্রকাশ, একে অপরের প্রতি গভীর অনুরাগ ইত্যাদি গতানুগতিকভাবেই প্রকাশ করে গেছে কবিতার প্রথমাংশে কিন্তু মধ্যমে এসে কবি বাঁক দিয়েছেন সচরাচর বিতর্কিত ইস্যুর বাইরে ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গী।
মেঘের ফাঁকে উঁকি দেয়া চাঁদের মত
ছেঁড়া শাড়ীর ফাঁক গলে বউর বুকের
সাদা একদলা মাংস দেখে নেয় স্বামী;
কাতর স্বগোক্তি তার-
‘ গরিবের আবার আব্রু বেআব্রু’!
আব্রু কিংবা বে-আব্রু বিষয়ের সাথে দারিদ্র্যতার সম্পর্ক এবং স্ব স্ব শ্রেণীতে অবস্থানরত মানুষের নিজেদের পারসেপসন। ধনী এবং শিক্ষিত মানুষদের ধারনা গরীব মানুষদের লজ্জা নেই, আব্রু নেই, পর্দা নেই, ইজ্জত নেই। এসবের একমাত্র মালিক ধনী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যদিও উচ্চবিত্তের জীবনাচরণে এসবের বহিঃপ্রকাশ আধুনিকতার ছায়ায় ভিন্নতা দেখা যায়। কিন্ত মনোজগতে গরীব এবং নিম্নবিত্ত সম্পর্কে খুব সাধারণ এবং প্রচলিত ধারনা সমাজে এমনভাবেই বিরাজ করে এবং তা নানাভাবে ছড়িয়ে পরে নিম্নবিত্তের মনোজগতেও। ফলে ধীরে ধীরে তারাও বিশ্বাস করতে শুরু করে ‘গরীবের কোন আব্রু নেই, থাকতে নেই”, কবি সেই সামাজিক বিশ্লেষণকেই একটি মাত্র স্বগোক্তির মাধ্যমে “গরিবের আবার আব্রু বেআব্রু” ফুটিয়ে তুলেছেন।
কবিতার শেষটায় দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন, দারিদ্র্যতা কিভাবে স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করে, কিভাবে দৈনন্দিন জীবনকে ছাড়িয়ে শোবার ঘরেও প্রবেশ করে, ঋণ কিভাবে দরিদ্র্য মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে, ঋণের জালে বন্দী মানুষ কিভাবে দীর্ঘশ্বাসের মধ্য দিয়ে ভালবাসাকে জিইয়ে রাখে।
মাথা রেখে স্বামীর বুকে ঘুমে ঢলে পড়ে
বুকে তার চাপা কষ্ট পোয়াতি হবে কবে...
...
‘আগে কর্জের টাকাটা পরিশোধ হোক
অসাধারন নির্মাণ !! কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা