আলোচনা ২১৮
মূলত জীবনবোধ, জীবন দর্শন, নৈতিকতা বোধ…..... জাতীয় কবিতা আমাকে ভীষনভাবে টানে। আমি তন্ময় হয়ে ভাবতে থাকি, কিনারা পাই না, তল হারিয়ে ফেলি, গভীরতার অনুসন্ধান আমাকে আলোড়িত করে, আন্দোলিত করে। আমি কবিতা কে কতগুলো সারি সারি শব্দ কিংবা লাইনের দৃশ্যমান আকাঙ্ক্ষা থেকে বেরিয়ে “কবিতা” হিসেবেই ভাবতে শুরু করি। কবি রণজিৎ মাইতি’র কাব্য “ব্যবধান”, সে রকম একটি দর্শন কাব্য।
ব্যবধান, কাব্যের মূল আলোচ্য ইস্যু, মানে দূরত্ত, একটি কথার সাথে অন্য কথার মিল নেই।
প্রশ্ন হলো, কোন কোন ইস্যুতে মিল নেই, কেন নেই? কার নেই?
আমার, আপনার, তার মিল নেই-
* কথা এবং কাজে মিল নেই
* বলা এবং করা'তে মিল নেই
* সত্য এবং মিথ্যে'তে মিল নেই
* জানা এবং বোঝা'তে মিল নেই
*ভাবনা এবং প্রকাশে মিল নেই
যতো ধরনের অমিল আছে, ব্যবধান আছে, সব জায়গাতেই সত্য-মিথ্যের একটা ব্যাপার থেকেই যাই। আমরা সব সময় সত্য কিংবা মিথ্যে, এরকম দুটো এক্ট্রিম লেভেল ভেবেই অভ্যাস্ত। এর মাঝে কি আর কিছু আছে? হ্যা আছে-
* সত্যকে মিথ্যের মোড়কে রাখা
* সত্যকে আড়াল করে মিথ্যেকে ফোকাসে রাখা
* মিথ্যেকে সত্যের রূপ দেয়া
* সত্যকে গোপন রাখা
* সত্য ও মিথ্যের মধ্যে দ্বন্দ তৈরী করা
কবি, আলোচ্য কবিতায়, প্রতিনয়ত আমাদের এ ধরনের আচরনে অভ্যস্ততার কথা বলেছেন। নিজের ইচ্ছে কিংবা অনিচ্ছেয়, চাপে পড়ে, ভয়ে, লোভে, ক্ষোভে কিংবা হিংসায়... নানা কারনে, নানাভাবেই আমরা সত্য মিথ্যের মধ্যে ধুম্রজাল তৈরী করি, অন্যকে মোহগ্রস্ত করি কিংবা দ্বিধাবিভক্ত করে তুলি। কেউ কেউ এতে সাময়িকভাবে লাভবান হয় হয়তো কিন্তু দীর্ঘ যাত্রায় এর নেভেটিভ ফলাফল হয় খুবই ভয়াবহ।
আমরা সত্য উচ্চারন করতে পারি না, সত্য উচ্চারনে ভয় পাই কেন? আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, আমাদের সামাজিকীকরন প্রক্রিয়া সত্য উচ্চারন করতে শেখায় না। সত্যকে আড়াল করতে শেখায় ক্রমাগতই।
আলোচ্য কবিতায়, একটি সহজ উদাহরন দিয়েছেন, যৌনতা কে আমরা ভিন্ন মোড়কে প্রকাশ করি, যৌনতা চাই কিন্তু প্রকাশ করি না, ইনিয়ে বিনিয়ে নানাভাবে বলি। সেটা ঠিক সত্যকে মিথ্যেয় রূপান্তর করা হয় না কিন্তু সত্যকে আড়াল করা হয়। আমরা বলি, সাজানো গোছানো সংসার চাই, সন্তান চাই কিন্ত সন্তান চাওয়ার সাথে যৌনতার সম্পর্ককে স্পষ্ট করতে চাই না, যৌনতা কে ঘৃনার চোখে দেখি। সংসার চাই কিন্তু সংসার ফর্মেশনের পেছনে যৌনতার ইচ্ছেকে স্বীকার করতে চাই না। যৌনতা জীবনের একটি অংশ, বলা যায় অন্যতম প্রধান অংশ, এটা চিরসত্য কিন্তু চিরসত্যকেও আমরা প্রকাশ করতে দ্বিধা করি।
কবি, কাব্যে একটি সহজ উদাহরন দিয়ে মানুষের চারিত্র্যিক ধারাকে চিত্রায়ন করে একটি বৃহত্তর চিত্রকে ধারন করতে চেয়েছেন।
(নোটঃ কবিতায় যতোটা বিস্তৃত পরিসর ক্যাপচার করতে চেয়েছেন, উপমা/উদাহরনটি ঠিক সে অর্থে একটু পরোক্ষ হয়েছে বলেই আমার ধারনা। আরো ভিন্ন কিছু উপমা/উদাহরন হলে ভালো হতো)
কবির জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।