আলোচনা ১২৪
বর্ণবাদ নিয়ে কবিতা, বিষয়টি নুতন নয়, হাজার বছরের ইতিহাস আছে এর পেছনে, মার্টিং কিং লুথার থেকে শুরু করে নেলসন মেন্ডেলা, কত মানুষ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে কিন্তু বর্ণবাদ কি শেষ হয়েছে, এর কি বিলুপ্তি ঘটেছে? বর্ণবাদ এখনো পৃথিবীতে নানা ফর্মে, নানা প্রক্রিয়ায় টিকে আছে। কবি আবারা নুতন করে “বর্ণবাদ”কে তার ভাবনায় নিয়ে এসছেন, আবারো মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছেন বর্ণবাদের ছোবল কত ভয়াবহ।
মূলত পুরো পৃথিবী এখন চারটি প্রধান ইস্যুতে নানাভাবে বিভক্ত-
১। সাম্প্রদায়িকতা (ধর্মভিত্তিক)
২। বর্নবাদ
৩। শ্রেনী বৈষম্য এবং
৪। জেন্ডার বৈষম্য
প্রত্যেকটি ইস্যুই আলাদা আলাদা কিন্তু বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে এর শেকড় এক সূত্রে গাথা। কবিতার শিরোনাম “বর্ণবাদ” কিন্তু কবিতা জুড়ে আছে, বর্ণ এবং ধর্ম আবার অন্য ধরনের বৈষম্যের কথাও বলেছেন। তাহলে কি সবই “বর্নবাদ”, এক্টু খটকা লাগতেই পারে। কিন্তু
উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ি-বর্ণবাদ হলো সেই দৃষ্টিভঙ্গি, চর্চা এবং ক্রিয়াকলাপ যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে মানুষ জ্ঞানিকভাবেই অনেকগুলো গোষ্ঠীতে (races) বিভক্ত এবং একই সাথে বিশ্বাস করা হয় কোন কোন গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য উঁচু অথবা নিচু; কিংবা তার উপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী; অথবা বেশি যোগ্য কিংবা অযোগ্য।
বর্ণবাদের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করাটা কঠিন। কারণ, গবেষকদের মধ্যে গোষ্ঠী (race) ধারণাটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এছাড়াও কোনটি বৈষম্য এবং কোনটি বৈষম্য নয় সেটি নিয়েও সবাই একমত নয়। বর্ণবাদ কখনো গায়ের চামড়ার রং দিয়ে হতে পারে, কখোনো আঞ্চলিকতা দিয়ে হতে পারে, কখনো গোত্র দিয়ে হতে পারে, কখনো বর্ণ (caste) দিয়ে হতে পারে। কিছু কিছু সংজ্ঞা অনুসারে, কোনো মানুষের আচরণ যদি কখনো তার জাতি বা বর্ণ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেটি অন্য কারো জন্য ক্ষতিকর না হলেও তাকে বর্ণবাদ বলা হবে। অন্যান্য সংজ্ঞায় শুধুমাত্র বর্ণবাদ দিয়ে প্রভাবিত হয়ে শোষণ এবং অত্যাচার করাই বর্ণবাদ।
ইতিহাসের নানা পর্যায় (যেমন-সামন্ত প্রথা, দাসপ্রথা......)অতিক্রম করে বিশ্ব আজ আধুনিক সভ্যতায় উজ্জ্বল বলে দাবি করা হয়, বিজ্ঞানের আবিস্কার আর মানবিকতার চরম উৎকর্ষতায় এখন তো আর কোন রকম বৈষম্য থাকার কথা নয়, বর্ণবাদ তো নয়ই। কিন্তু কবি এখনো বর্ণবাদ সহ নানা ধরনের বৈষম্য দেখতে পান প্রতিনিয়ত। সংজ্ঞানুযায়ী, বর্নাবাদ বিলুপ্ত হয়েছে, কাগজে কলমে বিশ্বে কোথাও এখন আর বর্ণবাদ নেই কিংবা আছে কিন্তু কেউ সাহস করে উচ্চারন করে না। এক্ষেত্রে, এই কবিতা খুবই সাহসী উচ্চারন। কবি বলতে চেয়েছেন, সভ্যতার নির্মান কারো একক কোন সম্পত্তি নয় বরং নানা জনের, নানা মতের সম্মিলিত প্রয়াস এবং উদ্দ্যোগ কিন্তু তা স্বীকার করা হয় না।
পুরো কবিতা জুড়েই কবির মর্মাহত হৃদয় ফুটে উঠেছে, বর্ণবাদের কিংবা নানামুখী বৈষম্যের, সংঘাতের কারনে ভুলুন্ঠিত মানবতার কারনে। বর্ণবাদ কিংবা যে কোন প্রকার বৈষম্য বিলোপে মানব জাতিকে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে হবে, হতে পারে শতবছর কিংবা হাজার বছর।
কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা