আলোচনা ২৬
বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক সমস্যা এবং তা নিয়েই কাব্য রচনা করেছেন কবি পলাশ দেব নাথ তার ‘ বাল্য বিবাহ’ কাব্যে বেশ সুন্দর করে। এত বৃহৎ সমস্যাকে সামগ্রিকভাবে কবিতার স্বল্প পরিসরে বেশ দক্ষতার সাথেই রচনা করেছেন। বাল্য বিবাহের কারন, তার কুফল এবং প্রতিকারের উপায় বর্ণনা করেছেন, এক কথায় একটি প্রবন্ধকে কবিতার ছন্দে বন্দি করেছেন।
বাল্য বিবাহ একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা, আমরা সবাই জানি এবং তা দূর করার জন্য যেমন আইন প্রনয়ন দরকার, আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার আবার তেমনিভাবে সামাজিক সচেতনতা ছাড়া কোনভাবেই এত বড় সমস্যাকে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কবি। আইনের শাসন এবং সামাজিক আন্দোলন দুইয়ের সম্মেলনে যে কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব, যা এই কবিতার মুল প্রতিপাদ্য বিষয়।
শুধু আইনের মাধ্যমে কোনভাবেই ‘বাল্য বিবাহ’ রোধ করা সম্ভব নয়, যদি না আমরা বাল্য বিবাহের মূল কারণগুলো এড্রেস করতে পারি। অনেক অনেক কারণের মধ্যে মুল কারণগুলো হোল, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব, দারিদ্র্য, মেইল প্রেফারেন্স, কুসংস্কার ও প্রচলিত সংস্কৃতি, ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভুল ধারনা, ধর্মীয় অনুভুতি, ভুল ব্যাখা এবং অশিক্ষা।
কবিতায় বেশ সুন্দর করে বাল্য বিবাহের কুফলও বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে প্রধানতম কুফল হোল- মাতৃ মৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া, পুষ্টিহীনতা, মরবিডিটির হার বেড়ে যাওয়া যা জাতীয় অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের বাধা এবং সর্বোপরি জনসংখ্যার চাপ বহনে সক্ষমতার অভাবে ব্যক্তি পরিবার এনং রাষ্ট্রের ভয়াবহ দুর্গতি।
প্রতিকারের উপায় হিসাবে কবি বর্ণনা করেছেন, আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো দরকার এবং একটি সমন্বিত সামাজিক আন্দলনের রূপদানের মাধ্যমে তার প্রতিকার এর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এক্ষেত্রে সকল প্রতিষ্ঠানের (যেমন সরকার, স্কুল, পরিবার) পাশাপাশি যুবসমাজকে এগিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন কবি। একমাত্র যুব শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলেই এত বড় একটি সমস্যাকে মোকাবেলা করা সম্ভব। তাই যুব সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সকল প্রতিষ্ঠানকে এক যোগে কাজ করারও তাগিদ দিয়েছেন কবি।
সবশেষে, সাধারনভাবে যেসব বিষয়কে কেন্দ্র করে কবিতা লেখা হয় এনং পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন হয়, এই কবিতা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা যা জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে প্রয়োজনীয়তাকে অনুভবে আনবে বলেই আমার ধারনা। কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো।