আলোচনা ১৬৯
কবিতাটি একই সাথে মজার এবং খুবই বাস্তবিক চিত্রায়ন করছেন কবি অনন্য কাওছার, তার কাব্য “এতো বেশী কেয়ার আমার ভাল্লাগে না”তে।
বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন দেখেছি নানাভাবে। আশে পাশের প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রি মধ্যেকার কেয়ারিং ভাব মাঝে মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী করে। আবার কেউ কেউ বলে, “কেয়ারিং” নাকি ভালোবাসার জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। একে অপরের প্রতি কেয়ারিং মনোভাবই নাকি ভালোবাসা টিকিয়ে রাখে। কথা হয়তো সত্য কিন্তু
প্রশ্ন হলো, “কেয়ারিং” কতটা হলে ভালো হয়, তার কি কোন মানদন্ড আছে। কেয়ারিং ভালোবাসা প্রকাশের একটি সূচক হতে পারে কিন্তু একমাত্র মানদন্ড কি? হলেও, সেটা কত পরিমান হবে? দুজনের কাছে “কেয়ারিং” এর পরিমানগত প্রত্যাশা ভিন্ন হতেই পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ ভালোবাসাকে “চর দখল” কিংবা “জমি দখলের” মতো মনে করে থাকে আর সেখাঁনেই যতো ঝামেলার উৎপত্তি হয়। ভালোবাসার নামে “কেয়ারিং” এতো বেশী হয়ে যায় যে, মনে হয় জমি দখল করা হয়ে গেছে। একে অপরকে ভালোবাসার পরও প্রত্যকের একটা নিজস্ব জীবন আছে, সত্ত্বা আছে, পছন্দ-অপছন্দ আছে, ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয় আছে। কিন্তু ঐ যে অতিরিক্ত কেয়ারিং এর কারনে তখন নিজের সত্ত্বা বিলীন হয়ে যায় ফলে ভালোবাসা তিক্ততায় পরিনত হয়।
সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে, সেটা ভালোবাসা হউক কিংবা কেয়ারিং হউক, লিমিট অতিক্রম করা হলে তখন আর সেটা ভালোর রূপ পরিবর্তন হয়ে যায়। জীবনের যে কোন বিষয়েই “লিমিট”ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হয়। প্রবাদে আছে “অতি ভক্তি চোরের লক্ষন”, কিংবা অতি ধার্মিক মানেই বক ধার্মিক ইত্যাদি।
প্রবাদ ছাড়াও, আমরা দেখি, অতি ভালো মানুষ, অতি মেজাজী, অতি বদরাগী, অতি প্রেম নিবেদনকারী... অর্থাৎ যখনই অতি শব্দটি যোগ হয় তখন মূল বিষয়টি হারিয়ে গিয়ে নেগেটিভ রূপ ধারন করে। কবি এখানে সে বিষয়টিই খুব পরিস্কার করে বলেছেন “এতো বেশী কেয়ারিং আমার ভাল্লাগে না” মানে অতি কেয়ারিং এর কারনে নিজের স্বাভাবিক জীবন অস্বাভাবিক হয়ে যায়।
সারাক্ষন, গোপাল হাতে নিয়ে সামনে আসা, বলার আগেই চায়ার কাপ নিয়ে হাজির, সার্বক্ষনিক কাছাকাছি ঘুরঘুর করা, কিংবা কোথায় যাচ্ছি, কখন যাচ্ছি, কখন ফিরবো, কার সাথে থাকছি, কতক্ষন থাকছি ইত্যাদি বিষয়ের উপর সার্বক্ষনিক কেয়ারিং থাকলে সেটা তখন “স্পাই গিরি হয়ে যায়” কিংবা মনিটরিং পর্যায়ে চলে যায়, নিজের জীবন তখন অতিষ্ট হয়ে পড়ে।
একটু অসুখ হলেই, উহ ! আহ ! কি করবে দিশে হারিয়ে ফেলা, দুর্ভাবনায় থাকা, ভীষন মন খারাপ করে থাকা...... এগুলোই আসলে মাত্রারিক্ত কেয়ারিং হিসেবে খ্যাত। এগুলোকেই কবি বলতে চেয়েছেন “ভাল্লাগে না”, বরং জীবনকে তার স্বাভাবিক গতিতে, স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দিলে, নিজেদের মধ্যকার প্রেম, ভালোবাসা কিংবা কেয়ারিং বিষয়টি জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে।
বিষয়টি অনেকেই সঠিকভাবে বুঝতে পারে না ফলে ভালো করতে যেয়ে জীবন বিষিয়ে তোলে। চমৎকার একটি ইস্যু নিয়ে কাব্য রচনার জন্য, কবির জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।