আলোচনা ২২৪
জীবিত এবং মৃত মানুষেদের মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারাখা আছে। যে কোন দেশে, যে কোন শহরের অধিবাসীরা এই সীমারেখা মেনে চলেন, এই সীমারেখা ধরেই চলে রীতিনীতি, চর্চা এবং সংস্কৃতি। জীবিত মানুষের একটা জীবন প্রনালী থাকে, অধিকার থাকে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন থাকে…কিন্তু মৃত মানুষের কিছুই থাকে না।
সাধারনত কবিতা প্রথম থেকেই পড়া হয় শেষ পর্যন্ত, কেউ উলটো করে অর্থাৎ শেষ থেকে কবিতা পড়া শুরু করে না। এই কবিতাটি প্রথম থেকে পড়তে পড়তে মনে হবে, এ আর এমন কি!! খুব সাধারন, সাদামাটা কথা বলেই যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ চার লাইনে, পুরো ভাবনা পাল্টে যাবে পাঠকের, আবার নুতন করে ভাবতে শুরু করবেন, আমারও তাই হয়েছে।
জীবতদের শহর, জীবতদেরই কথা বলার অধিকার এখানে মৃতদের কথা কেউ শোনে না, তাদের ভাষা কেউ বোঝে না, কবিতায় কোন সুর থাকে না, ভাব প্রকাশ পায় না, পত্রিকায় কোন সংবাদ থাকে না, দুঃখের কোন রঙ থাকে না, তাদের শোকে কেউ শোকাহত হয় না, মৃতের কাছে কেউ আসে না, তাদের কোন অধিকার থাকে না ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব সাধারন কথা, আমরা সবাই সেটা জানি।
কবি রেদওয়ান তালুকদার, এবার পুরো বাক নিলেন, পাঠককে ভিন্নভাবে ভাবাতে শুরু করালেন শেষ চার লাইনে এসে।
এটা জীবিতদের শহর
তুমি জীবিতদের শহরে!
সুতরাং ততটুকু মরো,
যতটুকু মৃত্যুতে দৃশ্যমান!..
জীবিত এবং মৃত, এর মাঝে কি অন্য কোন মানুষ থাকে। পরিসংখ্যানবিদ জনশুমারীতে, জীবিত অথবা মৃত মানুষ গননা করে, এর মাঝামাঝি আর কেউ থাকতে পারে সেটা স্বীকার করে না কিন্তু কবি অন্য একজনের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন, যাকে “জীবন্মমৃত” বলা হয়। জীবিতদের শহরে কেবল জীবিতদের কথাই বলা হয় আর মৃতদের অতীত স্বীকার হয় কিন্তু “জীবন্মমৃত”দের কোন অস্তিত্ব নেই তাই কবি বলেন-“ সুতরাং তুমি ততটুকু মরো/যতটুকু মৃত্যুতে দৃশ্যমান”।
এবার কবিতাটি উলটোদিক থেকে পড়লে, সাধারন বাক্যের মতো কেবল “মৃতদের” কথা বলা হচ্ছে, এমনটা মনে হবে না, কিছু মানুষের করুন আর্তনাদ ভেসে আসবে কানে। যাদের মানুষ হিসেবে কোন প্রকার অধিকার তো নেইই, অস্তিত্ব পর্যন্ত স্বীকৃত নয়। অথচ জীবতরাই কিছু মানুষকে “জীবন্মমৃত” করে রাখে। সে কারনেই বলা, হয় জীবিত থাকো নয়ত মৃত্যুতে দৃশ্যমান হও।
কবিতাটি ভীষন ভালো লেগেছে। কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।