আলোচনা ২০২
কবি রশিদ হারুন তার লেখার নিজস্ব একটা স্টাইল দাঁড় করিয়েছেন। কবিতার ইস্যু যাই হউক, তার স্টাইল সেই একই, অনেকের কাছে একই স্টাইলের লেখা গতানুগতিক লাগতে পারে। আমার কিন্তু ভীষন ভালো লাগে। আমি ভীষন রকম ভক্ত তার লেখার। বলা যায় তার পুরো পাতাই আমার পড়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৫৪৪টি কবিতা প্রকাশ হয়েছে পাতায়, এর মধ্যে ৮০% কবিতাই আমার পড়া হয়েছে। এগুলো কি গদ্য কবিতা, আধুনিক কবিতা নাকি কথা কাব্য? কবিতার শ্রেনী বিশ্লেষন যাই হউক, আমার ভালো, তাই পড়ি।
তার কবিতা বিশ্লেষন করতে একটু খটকা লাগে। কোথা থেকে শুরু করবো, কোথায় শেষ করবো। শুধু একটি মাত্র লাইন বা কয়েকটি মাত্র শব্দ দিয়েই পুরো কবিতার বক্তব্য বুঝতে পারি কিন্তু লাইন ধরে ধরে পড়তে পড়তে একটি বিষাদ আশ্রয় নেয় মনে, কখনো বিরহ ছাপিয়ে যায় সমগ্র অন্তর জুড়ে। আবার যখন প্রেমের কবিতা হয় তখন নিজের অজান্তেই মুচকি হাসি ফুটে ওঠে হয়তো, যদিও আমি নিজে দেখতে পাই না, অন্যরা হয়তো সেই মুচকি হাসি দেখতে পায়। প্রেম, বিরহ কিংবা বিষাদকেও তিনি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন, অনেকটা দৃশ্যমানতার সাথে। কবিতা পড়তে পড়তে যেন দেখতে পাচ্ছি সেই দৃশ্য। প্রতিবাদের কবিতাও লেখেন কোন হুঙ্কার ছাড়াই, কোন শব্দের গাম্ভীর্য থাকে না, থাকে না অযথা রূপকের বাড়াবাড়ি কিংবা অহেতুক ছন্দের চেষ্টা। মনে হয় যেন, কবি তার কবিতা শুরু করে দিয়ে কোথাও পালিয়ে গেছেন কিন্তু কবিতা তার নিজ গতিতেই চলছে।
তবে কবিতায় শব্দের বেশ অপচয় করেন উনি। সাধারনত আমরা জানি, কবিতায় শব্দের ব্যাপারে ভীষন কিপ্টে হতে হয় নয়তো সেটা গল্প হয়ে যায়।কবিতায় ঘটনার বা ইস্যুর ফোকাস থাকে বর্ননা থাকে না, আর গল্প বা উপন্যাসে বর্ননাই প্রধান ফোকাস থাকে। আমার মনে হয়, কবি’র শব্দের অপচয় দূর না করার ইচ্ছেটাই একটা নিজস্ব স্টাইল তৈরী করে দিয়েছে।
আজকের কবিতার প্রধান চরিত্রের মানুষটির আশ্রয়ের অভাব ছিল। কিন্তু ভৌত কাঠামোর কোন আশ্রয়ের জন্য মানুষটির কোন আক্ষেপ ছিল না, ছিল মানষিক আশ্রয়ের ভীষন রকম অভাব। সেই অভাব বোধ থেকেই প্রতিদিন একা একাই বেঁচে ছিলেন তিনি কিন্তু মরতে মরতে, সকলের অগোচরে, অদৃশ্য থেকে।
“মৃত মানুষটার চোখ দু’টো যেন এখনো আকাশ দেখছে!মনে হয় আহত কবিতাটি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আকাশে উড়ছে, আর তিনি পাখিটাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন” বিষাদে ভরা মানুষটির কফিন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, অন্তত আমি দেখতে পাচ্ছি।
মানুষটার আশ্রয়হীন মনটা, এখনো পৃথিবীর পথে পথে ঘুরছে, শুধু একটু বিশ্রামের জন্য। একটা রহস্য ঘেরা মানুষ, কি ঘটেছিলো তার জীবনে, কেন তিনি আশ্রয়হীন হলেন... নানা প্রশ্ন জন্ম দেয় মনে।যে কথা আগেই বলেছিলাম, কবিতায় বর্ননা থাকে না, পেছনের খবরও থাকে ন। পাঠককে তার নিজের মতো করে পেছনে লেগে থাকতে হয়, চিন্তার জগতে ঝড় তুলেই খুঁজে পেতে হয়, এখানেই কবিতার সার্থকতা, পাঠককে ভাবতেই বাধ্য করে। কবিতার বাঁকে বাঁকে নানা কথা লুকানো আছে কিন্তু সব বাঁক ঘুরে একটা উপসংহার টানা তো যায়ই, “মানুষটা ছিলো আশ্রয় হীন, কিন্তু কেন, কি কারনে, কারো অবহেলায়, নিজের ভুলে, অন্যের আঘাতে...???? নানা প্রশ্ন থেকেই যায় ।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা