বিশ্লেষণ-৪৫

অনেক দিন আগে পোস্ট করা কবি ড. শাহানারা মশিউর এর পাতা দেখতে দেখতে ‘অনুপ্রেরনা’ চোখে পড়লো, কবিতাটি বেশ ভালও লাগলো তাই আলোচনার সুত্রপাত। নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য যেমন ‘পজেতিভ ভাবনা’ দরকার তেমনি অন্যের মনের মধ্যে শক্তি প্রদানের একটি অকল্পনীয় পদ্ধতি হল ‘অনুপ্রেরণা’ প্রদান করা। অনেক সময় লক্ষ টাকার বিনিময়ে যা অর্জন করা যায় না, সেটাই অর্জিত হতে পারে শুধুমাত্র অনুপ্রেরনার মাধ্যমে।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়, আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে অন্যকে অনুপ্ররনা দেয়ার প্র্যাকটিস খুব একটা দেখা যায় না। বরং আমরা উল্টোটা করে খুব আনন্দ পাই, অন্যেকে পিছিয়ে দেয়ার মধ্যেই আমাদের যত আনন্দ। কিন্তু অন্য অনেক দেশে দেখেছি, ছোটবেলা ত্থেকেই বাচ্চারা বড়দের দেখে দেখে শিখে ফেলে কিভাবে অন্যকে অনুপ্রেরনা দেয়া যায়। অনেক কাজ, হয়তো কিছুই হয়নি কিন্তু তারপরও হতাশ না করে বলে, খুব ভাল হয়েছে কিন্তু আরও ভাল করতে হবে। নেগেটিভ ফিডব্যাক গুলো পজেটিভ ভাবে দেয় ফলে অন্য কেউ হতাশ না হয়ে নুতন উদ্যমে শুরু করে। কিন্তু আমারা সেটা পারি না, আমারা ‘কিছুই হয়নি’, ‘তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’, ‘এত খারাপ কাজ জীবনে দেখিনি’ ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগে অন্যকে হতাশ করে ফেলি ফলে তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা অমিত সম্ভাবনার শক্তিকে বিনষ্ট করে ফেলি। কবি শাহানারা মশিউর ‘অনুপ্রেরনার’ মাধ্যমে সেই অভাবনীয় শক্তি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে তার বক্তব্য রেখেছেন কবিতায়।

বিশাল এক সম্ভবনার কথা এত অল্প কথায় বলা যায়, খুব অবাক হয়ে কবিতাটি বার বার পড়েছি এনং আলোচনার সময়ও বিষয়টি বার বার ভাবিয়েছে।  আমরা যে কোন বড় কোন কাজ করার আগে নানা রকম শর্ত তৈরি করি, চুক্তি করি, দুপক্ষ তাতে স্বাক্ষর করি কিন্তু তারপরও অনেক সময় আকাঙ্খিত ফলাফল পাই না অথচ কোনপ্রকার চুক্তি, স্বাক্ষর  কিংবা শর্ত ছাড়াই মানুষের ভেতরকার শক্তি কাজে লাগিয়ে আমারা অনেক বড় কিছু অর্জন করতে পারি শধুমাত্র ‘অনুপ্রেরনা’ প্রদানের মাধ্যমে। তাই কবি লিখেছেন- শর্ত নেই, স্বাক্ষর নেই, নেই কোন চুক্তি, অনুপ্রেরণা এক অদৃশ্য শক্তি। জীবনের পর্বে পর্বে, বিপদে আপদে, বিশেষ কোন বিষাদে, চৈত্রের দুপুরে হৃদয় যখন তপ্ত, অনুপ্রেরণা বয়ে আসে শীতল হাওয়ার মত”।  কি অসাধারন এক বক্তব্য !!!!

বেশ চমৎকার কয়েকটি উদাহরন দিয়েছেন কবি। উদাহরন থেকে যিনি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন, অন্তরে ধারণ করতে পারবেন তার জন্য মাত্র কয়েকটি উদাহরণই যথেষ্ট অন্যথায় দীর্ঘ উপন্যাস লিখেও শেখানো যায় না। কবি বলেছেন, হাল হারিয়ে ফেললেও মাঝি আবার নুতন উদ্যমে হাল ধরে, অর্থাৎ প্রকৃতির মধ্যেই আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। কোন কিছুতেই হতাশ হতে নেই, বিফল হলে, বারংবার চেষ্টায় আবার সফল হওয়া সম্ভব, ডানা ভাঙ্গা আহত পাখিও আবার আকাশে উড়তে পারে, তা কবি লিখেন- “হাল ছাড়া মন মাঝি আবার বৈঠা ধরে, ডানা ভাঙ্গা আহত পাখি আবার আকাশে উড়ে অনুপ্রেরণার কারনে। হতাশায় শুষ্ক ভাবনা সিক্ত হয়-অনুপ্রেরণার আর্দ্র্রতায়, মনোবল উত্তোলনে কর্মশক্তি ফিরে পায়”

শুধুমাত্র অনুপ্রেরনার মাধ্যকে কত কিছুই না অর্জন করা সম্ভব, অনুপ্রেরণা প্রদানে কোন পরিশ্রম নেই, কোন অর্থ খরচ হয় না অথচ আমারা সেই ‘অনুপ্রেরনা’ দিতেই কৃপণতা  অনুভব করি। কবিতাটি আমাকে ভীষণ ভাবে অনুপ্রানিত করেছে। কবির জন্য রইলো অশেষ শুভেচ্ছা।