আলোচনা ২১৩
কবিতাটি ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ, একেশ্বর বাদে নিজেকে সমর্পন এবং মানবতাবাদের প্রতি সমর্থন করে লেখা। যদিও ধর্ম এবং মানবতাবাদ, একের মধ্যেই অন্যের লুকিয়ে থাকা। মূলত, ধর্মের মধ্যেই মানবতাবাদ থাকে কিন্তু মানবতাবাদের মধ্যে ধর্ম নাও থাকতে পারে। সে কারনে, আধুনিক কালে অনেকেই ধর্মীয় চেতনা থেকে মানবতাবাদকে আলাদা করে দেখে থাকেন, দেখতে পছন্দ করেন। মূলত নাস্তিকতা চর্চা থেকেই ধর্ম চর্চাকে সাম্প্রদায়িক চর্চা হিসেবে দেখে থাকে এবং সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই মানবতাবাদকে ধর্মচর্চা থেকে আলাদা করার চেষ্টা করা হয়। ধর্ম এবং চর্চার মধ্যেকার পার্থক্যের কারনে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পেছনে দায়ী। ধর্মকে ধর্মগ্রন্থ দিয়ে বিচার না করে, মানুষের ধর্ম চর্চাকে কেন্দ্র করে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারনে এ ধরনের যুক্তি তর্কের সুযোগ তৈরী হয়। মানুষ ভুল করে, মানুষেরই ভুল হয় ফলে কোন মানুষকে কোন ধর্মের মডেল হিসেবে বিবেচনা করাই একটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। বিজ্ঞানের নানা আবিস্কার মানুষের অকল্যানে ব্যবহার হওয়ার জন্য বিজ্ঞানকে দায়ী করা যেমন মূর্খতা তেমনি, কোন ধর্ম চর্চায় কিছু মানুষ কিছু ভুল করে হয়তো, সেটা দিয়ে ধর্মের মহত্ত কিংবা সঠিকতা যাচাই করাও মূর্খতা।
দুটো শব্দ, কবিতার মূল কেন্দ্র বিন্দু, বিকোই না অর্থাৎ বিক্রি করি না। অর্থের লেনদেন ছাড়াও নানাভাবে কোন কিছু বিক্রি হতে পারে। নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ানো জন্য, কোন লোভ চরিতার্থহ করার জন্য, সম্মান বৃদ্ধির জন্য কিংবা আরো, আরো অনেক কারনে মানুষ নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে থাকে, নিজের সত্ত্বাকে বিক্রি করে থেকে। নিজের স্বত্বা মানে, নিজের নৈতিকতা, মানবিকতা, মানবতাবোধ, ধর্মিয় চেতনা, সততা, অন্যায় আচরন থেকে বিরত থাকা, অন্যকে অন্যায়ভাবে আঘাত না করা ইত্যাদির সম্মিলিত নিজের একটা অবস্থান যা কোনভাবেই বিসর্জিত হবে না, কারো কাছেই না, কোনভাবেই নতি স্বীকার হবে। আলোচ্য কবিতায় কবি এরকম একটি শক্ত অবস্থানের কথা উচ্চারন করেছেন নির্ভীকচিত্তে।
যতোই আমাকে লোভ দেখাও, ভয় দেখাও কোনভাবেই আমি নতি স্বীকার করবো না, কোনভাবেই আমাকে করায়ত্ব করা যাবে না। কোটি টাকার বিনিময়ে কিংবা কোন অনুরোধে আমি কোন মনগড়া তত্ত্বে বিশ্বাসী হবো না। একমাত্র আল্লাহ’তে বিশ্বাসী আমি, তার কাছেই নত হই, তারই আনুগত্য করি এবং তারই দাসত্ব করি। আমি স্বার্থান্ধ কিংবা ধর্মান্ধ কোনটাই হবো না। আল্লাহ এবং এক ঈশ্বরের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, আনুগত্য, প্রেম এবং নিজেকে নিবেদন করার এক চূড়ান্ত লক্ষ্যের বলিষ্ঠ উচ্চারন।
আজকাল ধর্ম চর্চার ক্ষেত্রেও নানা মত, নানা দল, নানা বিভেদ দেখা যায়। ধর্ম চর্চাকে কেন্দ্র করে নানাভাবে বিভাজিত হয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও অনেকে জড়িত হয়ে পরে। এসব দলবাজী, চেতনা বাজী মুখোশের আড়ালে প্রায়শই দেখা যায় নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মতবিরোধ এবং অনৈতিক কর্মকান্ড। সবার সাথে তাল মেলাতে না পারলে হয়তো একাকীত্ব বরণ করে নিতে হবে কিন্তু নিজের নৈতিক অবস্থান, আল্লাহর প্রতি অবিচল থাকার জন্য যদি একাকীত্ব মেনে নিতে হয়, তাতেও আফসোস নেই। আল্লাহ এবং একেশ্বর বাদে এতোটা অবিচল আস্থা, বিশ্বাস এবং কঠোর অবস্থান সচরাচর দেখা যায় না। কবি, তার কবিতায় এরকম এক কঠোর নৈতিক অবস্থানের প্রতিই সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।
কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।