আলোচনা ১৭২
আসরের সিনিয়র কবি কবীর হুমায়ূন এবার একটি দর্শন কাব্য উপহার দিলেন “আলো ও অন্ধকার”, সচরাচর দর্শন ভাবধারা কাব্য উনার পাতায় খুব বেশি দেখি না, আজ হঠাৎ করেই চোখে পড়লো কবিতাটি। আলো এবং অন্ধকার, দুটো কেবল শব্দ নয়, এর মধ্যেই লুকানো আছে এক দর্শন।
একটু আগেই পড়ছিলাম, কবি রুদ্র রিয়াজ এর আলোচনা “অষ্ট্রিক ঋষির কবিতার মাংস ও কিছু কথা”, সেখানে বিশ্বাস ও অবিশ্বাস, আস্থা ও অনাস্থা, অমৃত ও গরল এমন কতিপয় বাইনারি দ্বন্দ্বের কথা বলেছেন। আলোচ্য কবিতায়ও একটি বাইনারি দ্বন্দ্ব দেখা যায়, “আলো ও অন্ধকার”। আক্ষরিক অর্থে শব্দ দুটির অর্থ বেশ পরিস্কার, আলোতে সব দেখা যায়, আলোর প্রতিফলনের কারনে বস্তুর উপর প্রতিফলিত আলোর কারনে আমরা সব দেখতে পাই, আলোর অভাবেই অন্ধকার তৈরি হয়। অন্যদিকে, অন্ধকার, আলোর প্রতিফলন না থাকার কারনে কিছুই দেখা যায় না, আমরা মূলত আলোকেই ভয়ই পাই। যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, তাদের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ করুন পরিস্থিতি।
কিন্তু কবি এখানে এর উলটো বলেছেন, সেখানেই দর্শন লুকানো, দারুন বলেছেন-
“অন্ধকারে অন্ধকার বেশি দেখা যায়”
“অনন্য জগতে হাঁটে সাধকের মন”
এরকম বেশ কিছু লাইন জুড়ে দিয়েছেন কাব্যে। এখানে অন্ধকারে বেশি দেখা যায়, ঠিক সেই অর্থে প্রতিফলিত আলোর প্রতিফলন দেখাকে বোঝানো হয়নি, মনের ভেতরে একটা দৃষ্টি শক্তি আছে, সাধকের যেমন থাকে, ভেতরের আলোয় সঠিক বিষয়টি দেখা যায়। একই ভাবে মনস্তাত্ত্বিক গন যেমন মানুষের মন পড়তে পারেন, কবি যেমন প্রকৃতির রহস্য পড়তে পারেন, যেমনি ভেতরের বিষয় দেখার জন্য সূর্য্যের আলো কিংবা কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হয়। মনের আলোয় অন্ধকারেও দেখা যায়।
অপরদিকে, আলোতে সব দেখা যায়, মানুষের লোভ-লালসা, বিত্তের নেশা, ঘর-বাড়ির প্রত্যাশা... এসবকেই মানুষ সুখের উপকরন ভাবে, এসবের পেছনে নিরন্তর ছুটে বেড়ায় ফলে তার মনের ভেতর জীবনকে দেখার, জীবনকে উপলব্দি করার, জীবনকে পড়ার শক্তি তৈরী হয় না। আলোতে থাকার পরও সে মূলত অন্ধকারেই থাকে, সে আলোর যথার্থতা থাকে না।
বাইরের আলো ভেতরের অন্ধকার তৈরী করে আবার বাইরের অন্ধকার ভেতরের আলো তৈরী করে- এই দর্শনটাই কাব্যের মূল বিবেচ্য। কাব্যটিকে পড়তে চাইলে, গতানুগতিক, তথাকথিত ধ্যান ধারনার বাইরে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
কবির জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।