আলোচনা ১৩০
কবিতার নানা শ্রেনীবিভাগের মধ্যে “কথা কাব্য” আমার বরাবরই প্রিয়। বেশ কিছু “কথা কাব্যগ্রন্থ” আমার কালেশনে আছে। সময় পেলেই কথা কাব্য পড়ি যদিও কথা কাব্য পড়া অপেক্ষা আবৃত্তি বেশী ভালো লাগে। তবে কথা কাব্য যদি “কথাগুলো কথা হউক”, এমন হয়, তবেই ভালো লাগে।
আলোচ্য কবিতাটিও একটি ছোট কথা কাব্য। এখানে দুটো শব্দের খেলা “ভালো থেকো” এবং “কষ্টে থেকো” নিয়েই পুরো আলোচনা। সাধারনত “কথা কাব্য” বেশী দেখা যায় “প্রেম’কে” কেন্দ্র করে কিন্তু এখানে বিরহটাও বেশ কাব্য করে বলা হয়েছে। প্রেমিক-প্রেমিকার বিদায় বেলায় শেষ বাক্যটি কি হবে? কোনটা বলা শোভন কিংবা কোনটা বললে, অপর পক্ষের জন্য “সে সময়কে” ধারন করা সহজ হবে? কথা কাব্যটি একটু ভিন্ন ধরনের, সেজন্য ভালো লাগা, সেজন্যই আলোচনার জন্য লিখতে বসা।
বিদায় বেলা সচরাচর, প্রেমিকা “ভালো থেকো”, এটাই বলে থাকে অর্থাৎ আমার অভাব থেকে নিজেকে মুষরে ফেলো না, নিজের মতো করে আবার সব গুছিয়ে নিও, ভালো ভাবে বেঁচে থেকো। এ জাতীয় কথা প্রেমিকা মুখে বললেও, সি নিজেও জানে এমনটা নাও হতে পারে। যদি নিজেদের নিয়ন্ত্রনের বাইরের কোন কারনে বিদায় হয়, তবে প্রেমিকার বক্তব্য এমন হতে পারে কিন্তু যদি নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারনে বিচ্ছেদ ঘটে তবে ভাষা অন্যরকম হতে পারে। এখানে প্রেমিকার মুখে “ভালো থেকো”, শব্দ শোনার পর প্রেমিকের “অভিমানী সুর” ভেসে ওঠে।
“কষ্টে থেকো”, শব্দের মধ্যে “বিরহ ব্যথা” বেশ ফুটে উঠে কিন্তু মনে হচ্ছে “ভালো থেকো” শব্দের দ্বারা সেই অনুভূতিরও সমাপ্তি ঘটে, তাই প্রেমিক, কোন সমাপ্তি চায় না, প্রেমিকা চলে যাবার পরও, কষ্টগুলো শব্দের গাথুনিতে বেঁধে রাখতে চায়, প্রেমিকাকে মনে করিয়ে দিতে তার কষ্টের কথা, তার বিরহের কথা কিন্তু প্রেমিকা “ভালো থেকো” শব্দের মাধ্যেমে তার পরিসমাপ্তি ঘটাতে চায়, যা প্রেমিকের পছন্দ হয়নি।
সাধারনত কোন প্রেম বা বিরহে’কে ফুটিয়ে তোলার জন্য অনেকেই বেশ ভারী ভারী শব্দ ব্যবহার করে এবং কবিতার পরিসীমা বেশ বড় করতেই পছন্দ করে। এখানে কবি’র মুন্সিয়ানা হলো, খুব অল্প শব্দে বিদায় বেলার কষ্টের মুহূর্তকে ধারন করেছেন।
আমার তো বেশ ভালো লেগেছে কথা কাব্যটি
কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো