বিশ্লেষণ -৪২
আধুনিকতা কাকে বলে? আধুনিকতা কি সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত নাকি ডমিন্যান্ট কোন একটি সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে আধুনিকতার সংজ্ঞা নির্ধারণ হবে? মুলত এসব মৌলিক প্রশ্ন উঠে এসেছে কবিতায়। কবি খুবই তির্যক ভাবে, অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন আমাদের তথাকথিত ধার করা আধুনিকতা সম্পর্কে ধারনা এবং মারাত্মকভাবে তিরস্কার করেছেন। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে লেখা কবি জ্যোতির্ময় ধর এর ‘আধুনিকতা’ এক অনন্য কবিতা।
পাশ্চাত্য সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমারা ভুলে যেতে বসেছি আমাদের দীর্ঘদিনের বেড়ে উঠা, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লালিত সংস্কৃতি। আধুনিকতার নামে আমারা আমাদের নিজেদেরকে উপরে ফেলছি আমাদের সংস্কৃতির রুট থেকে। বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে, নিজেরা আরামে ফ্লাটে বসবাস করছি আর ভাবছি আমার পাশ্চাত্য ধারায় আধুনিক বনে গেছি। কতটা কৃত্তিম মানুসিকতায় বেড়ে উঠলে প্রযুক্তির কল্যাণে নানা ছবি কিংবা ইউটিউবে কোণ ক্লিপ দেখে ইমশনে গদ গদ হয়ে উঠি কিন্ত পাশের বাড়ির গরীব কোন আত্মিয়র কষ্ট দূর করার জন্য একটুও বিচলিত হই না কিংবা কোন ভিখারিকে তীব্র ভাষায় গালাগালি করতেও দ্বিধা করি না।
কবি বেশ কয়েকটি উদাহরন দিয়ে আমাদের তথাকথিত আধুনিকতাকে তিরস্কার করেছেন যেমন-
“শুনেছি তোমরা নাকি FACEBOOK এ নারী সম্মানের গাও গান? আবার রাতের কালোয় মুখ লুকিয়ে বলো-"যাবে নাকি জান? এই কি আধুনিকতা? নাকি শুধুই বরবরতা!! শুনেছি আজকাল নাকি অ্যসিড ছুঁড়ে ভালবাসা হয় প্রকাশিত? বাহঃ সত্যিই আজ সমাজ আধুনিক অনেকাংশেই হয়েছে বিকশিত! শুনেছি আজকাল বেটা নাকি বাপকে পেটায়? মা-কে করে ঘর ছাড়া? বাপ করছে মেয়েকে রেপ!পাশের লোক মরলেও নাকি দেয়না কেও সাড়া? আহাঃ এতো দারুন আধুনিকতা! নাকি শুধুই বরবরতা”?
কবি আমাদের তথাকথিত ‘আধুনিকতা’কে ‘বর্বরতা’ এর তুলনা করে শেষ করেছেন। আমাদের বিবেক এবং মন মানুসিক্তাকে নুতন করে পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো।