আলোচনা ১৪৬
একটি চিরন্তন সত্য হলো, রাত এবং দিন, অন্ধকার এবং আলো, যথাক্রকে একে অপরকে আচ্ছাদিত করে রাখে। দিনকে আলোকিত করে সুর্য্যের আলো আর রাতকে ঢেকে দেয় অন্ধকার, যদিও কখনো কখনো মিটিমিটি তারার আলো রাতের অন্ধকারকেও মোহিত করে বিশেষ কোন দিনকে। আবার আমরা তর্কের খাতিরে বলতেই পারি, আধুনিক প্রযুক্তি, রাতের অন্ধকারকে দুর করে দিতে পারে। ইদানিং শোনা যাচ্ছে চীন আর্টিফিসিয়াল সুর্য্য এবং তারাও তৈরি করছে, অন্ধকারকে চিরদিনের জন্য মুছে দিতে কিংবা সুর্য্যের একক আধিপত্য রোধ করার জন্য।
এতোসব ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে, সাধারন নিয়ম, অবশ্যম্ভাবী এবং প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী দিন থাকবে আলোয় ভরপুর আর রাত থাকবে অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিন্তু কবি এখানে বিপরীতমুখী কথা বলেছেন, কেন? সেখানেই সংক্ষিপ্ত এই কাব্যের গভীরতা লুকিয়ে আছে। এতো অল্প শব্দে, এতো গভীর জীবন দর্শন উপস্থাপন করা যায়! সেখানেই কবিদের মুন্সিয়ানা। একটা সমগ্র উপন্যাস, মাত্র কয়েক লাইনের একটি কবিতা ধারন করতে পারে, যে কারনেই সাহিত্যের অন্যসব মাধ্যম অপেক্ষা, কবিতা একটি শক্তিশালী মাধ্যম, শব্দের উপর শাসন করে, শব্দের অপচয় রোধ করে, একজন কবি উপস্থাপন করেন অল্প কথায় বিশাল এক রত্নভান্ডার। যে কারনে অনেকেই কবি’দেরকে ‘শব্দ কামার” বলে থাকেন।
পারমিতা ব্যানার্জি এর “আলোর অন্ধকার”, “কিছু রাত শুধু আলোয় ভরা”, রাত তো অন্ধকার হবার কথা, কিন্ত আলো এলো কোথা থেকে? এই আলো দৃশ্যমান কোন আলো নয়, ভেতরে থেকে জন্ম নেয়া আলো, ভেতরে জমে থাকা আলো, হতে পারে সেটা কোন ভালো লাগার বিষয় বা ঘটনা, হতে পারে বিকশিত জ্ঞান, হতে পারে কোন স্মৃতি কিংবা অন্য কিছু যা ভেতরটা আলোকিত করে তুলেছে, যদিও তা রাত এবং যথানিয়মে অন্ধকার।
আবার “যে আলোতে অন্ধকারে, এ জগতে তুমি দিশাহারা”, অর্থাৎ দৃশ্যমান আলোর মাঝেও অন্ধকার থাকতে পারে একইভাবে, উলটো চিত্র হিসেবে। বাইরে টা আলো কিন্তু ভেতরটা এক নিঃসীম অন্ধকারে ডুবে আছে মন, ্দিশেহারা, যদিও ফকফকে আলো দেখা যাচ্ছে।
কবি, ভেতর এবং বাহির এর অবস্থা এবং অবস্থানকে আলো এবং অন্ধকার শব্দ দিয়ে চিরাচরিত দৃশ্যমানতাকে ভিন্নতর ভাবনায় পাঠককে গভীর থেকে আরো গভীরে নিয়ে গেছেন। অসাধারন লেগেছে, কবিতার গভীরতা, দর্শন এবং মাত্র অল্প কয়েকটি শব্দের ব্যবহার দেখে। অসাধারন !!
অনেক শুভেচ্ছা কবি, ভালো থাকবেন সব সময়।