আলোচনা ৬৬
কবিতার শুরুটা বেশ তাৎপর্য বহন করেছে, একটি শহরের সাথে মানুষের সম্পর্ক কি? একটি শহরে মানুষের নিরাপত্তা কতটুকু? খবর এবং মানুষ কে কার জন্য? লাশ কেন বেওয়ারিশ হয়? ইত্যাদি প্রশ্ন এবং বাস্তবতাকে সামনে রেখে কবি জি,এম, হারুন-অর-রশিদ তার কাব্য "একটি বেওয়ারিশ লাশের অপেক্ষা" শুরু করেছেন এভাবে-
“শহরের মানুষগুলো এখন আর খবর খুঁজে না,
খবরই তাদের খুঁজে ফেরে
এইতো সেদিন -‘বেওয়ারিশ’ এক লাশ খুঁজছে তার আপনজনদের"
ইদানিং ক্রসফায়ার নামক আজব এক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক চালে জেয়েজ হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র যন্ত্র নানা অনিয়মে, মসনদের গদি টিকিয়ে রাখতে অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন, মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে আজ, কাল্, পরশু, প্রায় প্রতিদিন। তেমনি একটি বাস্তবতা নিয়েই লেখা “বেওয়ারিশ লাশের অপেক্ষা"
এক বেওয়ারিশ লাশকে কেন্দ্র করে কবি, অঙ্কন করেছেন, নানামুখি বাস্তবতা। কিভাবে এবং কি কি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে মানুষ বেওয়ারিশ লাশ হয়ে যায়, লাশ হওয়ার আগে এবং পরের কেচ্ছা, বেওয়ারিশ লাশের মা- বোন তথা আত্মিয় স্বজনদের আহাজারী, বেওয়ারিশ লাশ তৈরিতে বুট পরুয়াদের দক্ষতা.........
এই নষ্ট রাজনীতি, নষ্ট রাষ্ট্র যন্ত্রের অত্যাচার থেকে নাগরিকদের নিরাপদ থাকার কৌশল হিসেবে ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ, তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা খোঁজা, মানুষের তৈরি বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা থেকে মহান আল্লাহর দরবারে বিচার চাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদিই কবিতার মুল অঙ্কিত চিত্রায়ন।
সব শেষে, এক মা’এর হাহাকার করে চিৎকার দিয়ে বলা “ ...আমাকে মাফ করে দিস, আমি কেন যে তোর নাম খোকা রেখেছিলাম?” এর মাধ্যমেই কবি, বর্তমান বিচার এবং আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার প্রতি তীব্র ঘৃণা ছুড়ে দিয়েছেন। নামের সাথে নাম মিলে গেলেই একজনকে ধরে নিয়ে, ইচ্ছে মত ক্রসফায়ার করে দেয়া, বেওয়ারিশ লাশ বানিয়ে ফেলা বর্তমান রাষ্ট্র যন্ত্রের এক চরম ব্যর্থতার বাস্তব রূপায়ন।
আমার বিবেচনায়, অসাধারণ এক কাব্য রচনা করেছেন কবি জি,এম, হারুন-অর-রশিদ, অভিবাদন কবি।