(নোটঃ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলা কবিতা আসরের “আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন-২০২২” এর আসর, কাথি, মেদেনীপুরে গত আগষ্ট ১৪, ২০২২ তারিখে। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আমার অংশগ্রহনের সুযোগ হয়েছিলো। সেখানেই তিস্তা থেকে ইছামতী (খন্ড ১ এবং খন্ড ২) উপহার হিসেবে গ্রহন করি । উল্লেখ্য, তখনই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, কবিতাগুলো পড়ার পর, পুরো দু খন্ডের উপর একটি আলোচনা/রিভিউ লিখবো।)
কাব্য সংকলন পরিচিতিঃ
তিস্তা থেকে ইছামতী, দুখন্ডে প্রকাশিত কাব্য সংকলন, প্রতি খন্ডে ৪০জন কবির কবিতা দিয়ে মোট ৮০জন কবির কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রতি কবির জন্য কবিতার সংখ্যা নয় বরং পৃষ্ঠা (২ পৃষ্ঠা বরাদ্দ) বরাদ্দ হয়েছে। কারো অনু কবিতা হিসেবে অনেকগুলো আবার কারো পৃষ্ঠা গুনে দুটি কবিতা। কতগু্লো কবিতা আছে তা গুনে দেখা হয়নি (সুচীতে কবিতার নাম নেই। ) দুখন্ডের সংকলন, ওর্কা পাব্লিশিং হাউস, কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে অগাষ্ট ২০২২ সালে, দুখন্ডের একই প্রচ্ছদে ছিলেন সুস্মিতা রায় চউধুরী চক্রবর্তী।
গ্রন্থ সংকলন সম্পর্কে আমার অনুভূতিঃ
প্রসঙ্গত একজন কবির যে কোন একটি কবিতা নিয়ে আলোচনা করলে একটি নির্দিষ্ট ধারা পাওয়া যায় কিংবা একজন কবির পুরো গ্রন্থ সম্পর্কেওঁ একই অভিমত। দুরকমের আলোচনা অর্থাৎ একটি কবিতা পড়ে কিংবা একজন কবির পুরো গ্রন্থ পড়ে পূর্বে বেশ কিছু আলোচনা লিখেছিলাম কিন্তু কাব্য সংকলন নিয়ে এর আগে কোন রিভিউ লিখিনি। এটা বেশ কঠিন কাজ, একেকজন কবির কবিতার ধারা ভিন্ন ভিন্ন বলে, সবগুলো কবিতা নিয়ে আলাদা আলাদা এক্টু করে হলেও আলোচনা করতে হয়, তাতে পরিসর অনেক বেড়ে যার, আবার নুতন একটি গন্থের জন্ম হয়ে যায়। তারপরওঁ লিখছি, একটি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, পাঠকের মন্তব্য পেলে সেরকম একটা সুযোগ হবে (অবশ্য যদি কোন মন্তব্য পাওয়া যায়)।
কিছু কিছু কবিতা পড়লে আমার এমন হয় যে, কবিতার অর্থ বুঝতে পারি না, কবিতায় কি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছেন কবি তাও বুঝতে পারি না কিন্তু কবিতাটি পড়তে ভালো লাগে, হৃদয়ে দোলা দেয়, স্পন্দন জাগে মনে, মন উদাসী হয়ে যায়... বেশির ভাগ কবিতাই আমার এমন হয়েছে। যদি একটি একটি করে কবিতা আলোচনা করতে হতো তাহলে অনেক কবিতার আলোচনা লিখাই আমার পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল।
অল্প কিছু কবিতা নিয়ে নিজের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। ওগুলো কি, অনু গল্পকে কবিতায় রূপান্তর করা হয়েছে নাকি কবিতার রূপ বৈচিত্র্য সম্পর্কে আমার অজ্ঞতা রয়েছে। তবে কবিতায় যে মোহনীয় রূপ থাকে সেটা টের পেয়েছি বেশ। সংকলনের জন্য কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ পটুতা ছিল, একটু তুলনামূলক প্রেক্ষাপটে বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়- যেমন-প্রতিদিন বাংলা কবিতার আসরে প্রকাশিত কবিতার মধ্যে যদি বাছাই করে কবিতা পড়ি এবং ৫% কবিতা ভালো লাগে তাহলে এখানে তা হবে ২৫%। তার মধ্যে অনু কবিতাগুলো প্রায় সবগুলোই ভালো লেগেছে। আশ্চর্য লেগেছে, দুটো খন্ডের প্রায় সবগুলো কবিতাই মনে হলো একজন কবিই লিখেছে, মানে লেখার স্টাইল, শব্দ চয়ন, গাথুনি, বিন্ন্যাস ইত্যাদি। এটা কিভাবে হলো, খুব ভেবেছি !!
শুনেছি, কাথি সম্মেলন উপলক্ষে খুব তাড়াহুড়ো করে প্রকাশনাটি করা হয়েছিল, সেই তাড়াহুড়ো ছাপ দেখতে পাচ্ছি স্পস্টতই, যেমন-
• দ্বিতীয় খন্ডের নাম্বার (২) থাকলেও প্রথম খন্ডের কোন নাম্বার নেই
• প্রথম খন্ড, “কথামুখ” যিনি (মালবিকা) লিখেছেন তার কোন পরিচয় না থাকাতে পাঠকের বুঝতে অসুবিধে হলো,আবার দ্বিতীয় খন্ডে কোন কথামুখ নেই।
• কথামুখ এ, গ্রন্থ সম্পর্ক বা কবিতা সম্পর্কে বা কবিদের সম্পর্কে কিছুই বলা নেই।
• সূচীতে শুধু কবিদের নাম দেয়া আছে, কবিতার নাম নেই, পৃষ্ঠা সংখ্যা নেই।
• কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় থাকলে ভালো হতো। সংকলন সাধারনত কাউকে সম্পাদনা করতে হয় বা সংকলন করতে হয় কিন্তু এখানে কারো নাম নেই।
• দুটো খন্ড, কিন্তু ভলিউম, গেটআপ, মেকআপ ইত্যাদি একই হবার পরওঁ, মূল্যের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে, কেন, তা বোঝা গেল না।
• দ্বিতীয় খন্ডের শুরুতেই, সংকলনটি কবি অগ্নি বসুকে সমর্পিত করা হলো, বুঝতে পারিনি, কেন?। ভাষা পড়েও বুঝতে পারিনি তিনি বেঁচে আছেন নাকি প্রয়াত? অনুমান করছি অগ্নি বসু বিখ্যাত কেউ একজন কবি, হয়তো ভারতীয় সবাই চেনেন তাকে কিন্তু সংকলনটির পাঠক তো ভারতেই সীমাবদ্ধ নয় (আমারও সীমাবদ্ধতা হতে পারে, আমি তাকে চিনতে পারিনি)
• শুরুতেই সম্পদকের কিছু কথা থাকলে ভালো হতো যেমন-সংকলনটির উদ্দেশ্য কি, কেন করা হলো, সামগ্রিকভাবে সকল কবিতা সম্পর্কে কিছু ধারনা দেয়া ইত্যাদি। এখন মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে শুরু হয়ে হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল, কোথাও কারো কোন পরচিতি নেই, একটু খাপছাড়া মনে হল।
• অদ্ভুত ব্যাপার হলো, গ্রন্থে কোন পৃষ্টা নাম্বার নেই, ফলে ইচ্ছে হলেই, নির্দিষ্ট কোন কবির কবিতা পড়ার সুযোগ নেই (পৃষ্টা নাম্বার নেই তো), প্রথম থেকে এক পৃষ্ঠা এক পৃষ্টা করে পড়ে যেতে হবে (এক্ষেত্রে সুচীতে কবিদের নাম থাকা আর না থাকা একই কথা)
• আমার ধারনা প্রেন্টিং এবং প্রকাশনার দুর্বলতার কারনে বেশ ভালো ভালো কবিতা নিয়েও সংকলনটি পাঠকের মনযোগ আকর্ষন নাও করতে পারে।
আশা রইলো, তাড়াহুড়োর জন্য সে সীমাবদ্ধতাগুলো ছিল, সেটা কাটিয়ে ভবিষ্যতে আরো ভালো সংকলন হবে। সংকলক এবং উদ্দ্যোক্তার জন্য রইলো শুভেচ্ছা।