কবি পরিচিতিঃ রুনা লায়লা। তিনি একজন কবি,গীতিকার, ছড়াকার ও সম্পাদক। জন্ম : ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৮৭ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার উত্তর নও পাড়া গ্রামে। সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা থেকে (প্রাণিবিদ্যা বিভাগে) বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেছেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা কলেজ থেকে বিএড করেন। তিনি শহরে বড় হয়ে উঠলেও তার প্রকৃতি ও মাটির প্রতি রয়েছে বিশেষ টান। ছোটবেলা হতেই তিনি সাহিত্যচর্চা খুব ভালোবাসেন। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যম লিটলম্যাগ, ম্যাগাজিন ও সাহিত্য ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করছেন। কর্মজীবনে তিনি একজন শিক্ষক এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যানের এসভিআরএস প্রজেক্টের একজন রেজিস্ট্রার। ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন ছেলে সন্তানের জননী। তিনি কবিতার আসরের সাথে যংযুক্ত আছেন ৬ বছর ৫ মাস হলো, এরই মধ্যে আসরের পাতায় ৬১৩টি কবিতা প্রকাশ করেছেন এবং এ পর্যন্ত বেশ কিছু একক এবং যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম ও প্রকাশকাল :
১। নিয়তির ডুবুচড়
২। জলকণার আবরণ ,
লোকসংগীতের গীতিকবিতার বই রুনাগীতি সহ কাব্যগ্রন্থ:
১। কাব্যশতদল,
২। নবদিগন্ত (কোলকাতায় প্রকাশিত),
৩। অবনীর শেষ শব্দ,
৪। সম্ভার,
৫। সঞ্চয়ন
৬। দ্বাদশ রবির কর।
তার একক কাব্যগ্রন্থ “নিয়তির ডুবুচর’ নিয়ে রিভিউ লিখছি। এই কাব্যগ্রন্থটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ সালে প্রকাশ করেছে অর্ক প্রকাশনী সংস্থা , ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে। প্রচ্ছদ একেছেন বুলবুল এবং রুবেল। চার ফর্মার কাব্যগ্রন্থটিতে মোট ১০৪টি কবিতা স্থান পেয়েছে।
নিয়তির ডুবুচর একক কাব্যগ্রন্থঃ মুখবন্ধে কবি লিখেছেন-কবির বিশেষত্ব হলো, “বেদনা থেকেও তিনি রসাস্বাদন করতে পারেন। ব্যক্তিগত বেদনার বিষবাস্প থেকে কবি কল্পনায় অমৃত সুধা আহরণ করতে পারেন। তখন বেদনাও যেন সাধারণ্যে মদুর হয়ে ওঠে”। নিয়তির ডুবুচর লিডিং কবিতা, কবিতার শিরোনাম দিয়েই কবি গ্রন্থের নামকরন করেছেন। কবি শুরুটা করেছেন-
মনের কপাট খুলে দহন-ব্যাথা ভুলে একাই হাঁটি
কীর্তি ঘেটে খুঁজে পেতে সুখ-সাফল্যের দেখাটি ;
যদি পাই খোঁজে শুকতারাটিকে আকাশের বুকে
স্বপ্ন-সুখের বাঁধবো ঘর না-হয় সেই পুণ্যলোকে।
গ্রন্থটি পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, কবি নানা ইস্যু দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখছেন এবং কোন রকম রাকঢাক ছাড়াই অকপটে যা অনুভব করছেন তাই প্রকাশ করছেন কবিতার কাঠামোতে নিঃসংকোচে। যে কারনে অনুভুতির প্রকাশগুলো প্রকাশিত হচ্ছে বাস্তবতায় মোড়া, অনুভবের অনুভূতিতে জড়ানো। কিছু অনু কবিতা আছে কিন্তু মোটাদাগে ২০-২৪ লাইনের কবিতার প্রতি আগ্রহ বেশি। দীর্ঘ কবিতার প্রতি একেবারেই অনীহা। গ্রন্থের একটি অন্যন্য দিক হলো, কবি’র আট বছরের ছেলে তাসিন ইসলাম রুহান (দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র) এর পাঁচটি কবিতা কবি নিজের কবিতার সাথে একই গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। আমার কাছে বিষয়টি দারুন লেগেছে। একজন মা তার ছেলের কাব্য প্রতিভাকে অনুপ্রানিত করছেন, নিজের সাথে জড়িয়ে রাখছেন, মা-ছেলে একসাথে কাব্য চর্চায় থাকছেন, পাঠককেও উদ্বুদ্ধ করেছেন। অসাধারন ভাবনা!!!
গ্রন্থের ১০৪টি কবিতায়, নানা বিষয় উঠে এসেছে, রয়েছে প্রেম-বিরহ, প্রতিবাদ-বিদ্রোহ, পূজা-ধর্ম, প্রকৃতি-ঋতু বৈচিত্র্য-পরিবেশ, স্বপ্ন-সফলতা-ব্যর্থতা, সাহস-উৎসাহ-উদ্দীপনা, দারিদ্রতা-শোষনের তাপমাত্রা, সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনা, সময়ের টানাপোড়ন, অন্যায়-প্রতিবাদ-আন্দোলন, মা-বাবার স্মরন, অনুভবের অনুভূতি…একটা কাব্যগ্রন্থে ইস্যু বৈচিত্র্যের সমাহার। পাঠক গ্রন্থটি পড়তে পড়তে কবি’র অনুভুতি, ভাবনা-চিন্তা এবং ভেতরের আকুতিকে পড়তে পারবেন খুব সহজেই।
কবি মানব সম্পর্ককে দেখেছেন জোয়ার ভাটার মতো করে, কখনো জোয়ারের মতো মনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আবার ভাটার টানে ভীষনভাবে পীড়িত করে তোলে। কবি লিখেছেন-
সম্পর্কের জোয়ার ভাটা
চলেছে অবিরত;
সবার্থলোভে সবাই যেন
করছি পালন ব্রত......
সম্পর্কের নানা দিক থাকে, তার মধ্যে অনুরাগও থাকে তাই কবি লিখেন-
অভিমানী চপল মেয়ে
রেগেছে আজ বেশ;
অনুরাগের খুনসুটিতে
বাঁধবে না আজ কেশ।
উপরের কিছু উদাহরন থেকেই কবি’র কবিতার বুনন সম্পর্কে পাঠক ধারন পাবেন। অল্প কিছু কবিতা বাদ দিলে, অধিকাংশ কবিতাই অল্প শব্দে, ছোট ছোট সীমাবদ্ধ লাইনে কবিতার মূল বক্তব্য প্রকাশ করেছেন, পাঠকের কাছে খুব সহজবোধ্য হবে বলেই মনে হয়েছে।
গ্রন্থটি আমার বেশ ভালো লেগেছে, বেশ কয়েকবারই পড়েছি। কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।