কবি ও কাব্যগ্রন্থঃ কবি বিভূতি দাস জন্মগ্রহন করেছেন দক্ষিন ২৪ পরগনা, ভারতবর্ষ, বর্তমানে বসবাস করছেন সোনারপুর, কোলকাতা-১৪৯, ভারতবর্ষ। তিনি বাংলার ধুলো মেখেই বেড়ে ওঠা। বৃহত্তর কোলকাতার দক্ষিন অংশে সোনারপুরে।কর্মজীবন ইতোমধ্যে অতিবাহিত করেছেন, বর্তমানে অখন্ড অবসর জীবন উপভোগ করছেন। সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি আজন্ম আগ্রহ। সময়ের দাবী মেনে আপন মনে খাতা কলমে ভাবনা চিত্রায়নের চেষ্টা করে থাকেন। বাংলা কবি ও কবিতার আসরের সাথে সংযুক্ত আছেন ১০ বছরে ধরে। আসরের পাতায় ইতোমধ্যে ১৬৩৩ কবিতা প্রকাশ করেছেন।
তার একক কাব্যগ্রন্থ “ক্য্যনাভাস” নিয়েই “বুক রিভিউ’ লিখছি। তার একক কাব্যগ্রন্থটি ২০১৮ সালে প্রকাশ করেছে প্রিয়শিল্প প্রকাশনা, কোলকাতা। কাব্যগ্রন্থটিতে ৯৭টি কবিতা স্থান পেয়েছে।
ক্যানভস একক কাব্যগ্রন্থঃ কবি বিভূতি দাস, বাংলা কবি ও কবিতার আসরের একজন জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন ভালো সংগঠক, নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব, তার কবিতায় ব্যক্তি মানুষের ভেতরের ছায়া প্রকাশ পায় নিজের অজান্তেই। তিনি কবিতা লিখেন সহজ প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠকের দাবীর প্রতি নজর রেখে। তিনি “ক্যানভাস”কাব্যগ্রন্থে ৯৭টি কবিতার মাধ্যেম তার অনুভব, যন্ত্রনা, আনন্দ ও স্বপ্নকে ফুটিয়ে তুলেছেন একান্ত নিজস্ব এক স্টাইলে। আসরের পাতায় তার সবগুলো কবিতা পড়ার সুযোগ না হলেও, কিছু কবিতা পড়ার সুযোগ হয়েছিলো এবং একটি কবিতার উপর আমার আলোচনাও প্রকাশ করেছিলাম আসরের “আলোচনা” অংশে কিন্তু ক্যানভাস কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত সবগুলো কবিতাই পড়ার সুযোগ্ হয়েছে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে।
কাব্যগ্রন্থের সবগুলো কবিতার শিরোনামগুলো পর্যবেক্ষন করলে কবি’র কবি স্বত্বা এবং অনুভব সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায় (সবগুলো কবিতার শিরোনাম নীচে দেয়া রইলো), যেমন-
“পুতুল খেলা নিয়ে মত্ত “কে তুমি”, “ন্যাংটো শিশু”? “বেলা অবেলা’র” কথা কার কাছে বলা হবে? “জনপ্রতিনিধি”?, সে তো “আধারের কাব্য”, যেন বা "লাগ ভেল্কি লাগ”। “স্বপ্নের ছায়াতলে”, যতোই “উষ্ণ নিঃশ্বাস” থাকুক, “উদাসী মন” ‘সংক্ষিপ্ত ভাবনা” দ্বারা “সংকেত” দিলেও “প্রেমের অপমান” সবাই ভুলে যায় “শনিবারের বিকেলে”……
গ্রন্থের প্রথম দুটো কবিতা “কে তুমি” এবং “ন্যাংটো শিশু” একে অপরের সাথে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মানবাধিকার এবং ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। কবি তার স্বভাব ভঙ্গিতেই তথাকথিত আধুনিকতা এবং সভ্যতার গালে চড় দিয়েছেন এবং তারই ধারাবাহিকতা চলমান রেখেছেন “আধারের কাব্যে”। পুরো কাব্যগ্রন্থ জুড়ে, বঞ্চিত, শোষিত মানুষের হা হা কারের সুর যেমন বেজে উঠেছে আবার বিপরীত অভিঘাতে তীব্র প্রতিবাদের ধ্বনি বেজে উঠেছে। “বেলা অবেলা”র কাব্যে কবি লিখেছেন-
“আস্তকুড়ের খাবার ঢুকে যায় পাকস্থলীতে, পরমানন্দে
পাতলা রাতের ফুটপাতে লাইটপোষ্টের ছায়ায় বাড়ে আবাদী
সংজ্ঞাবিহীন চরিত্রের ধার ধারে না সময়, সবেতেই সম্মতি
নগ্নতার আলোয় উদ্ভাসিত চরাচর, বেলা-অবেলায় আনন্দে”
কাব্যগ্রন্থে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সংগ্রামী আহবান যেমন আছে অন্যদিকে প্রেম এবং বিরহের নানা চিত্রায়নও আছে তবে প্রেম এবং বিরহের সুরে গতানুগতিক শব্দ পরিহার করে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করেছেন অনেকটাই প্রেম প্রকাশের জানা শব্দভান্ডারকে এডিয়ে। চিরাচরিত সমাজ সভ্যতা যেমন করে “নিখাদ প্রেম”কে অবজ্ঞা করে, অস্বীকার করে, অপমান করে, বেশ কয়েকটি কবিতায় সেই গতানুগতিক পিছিয়ে পড়া সমাজ চরিত্রের চিত্র খুজে পাওয়া যায়।
যদি চলতেই থাকে/কেড়ে নেওয়া হয় অধিকার/লঘু করা হয় অপরাধ/ হবে কি ভালো মানুষের/নাকি শুধু রাজনীতির কারবার...
কবি সমাজ সচেতনতা থেকে রাজনীতি সচেতনতার স্বাক্ষর রেখেছেন তার নানা কাব্যে। সমাজ, সভ্যতা, অগ্রগতি, আধুনিকতা, বেঁচে থাকা, সংগ্রাম এবং নিরন্তর টিকে থাকা... সবই নির্ভর করে রাজনীতির দোলাচাল এবং স্বচ্ছতার উপর। রাজনীতি কতোটা গনমানুষের কথা বলে আর কতোটা নিজেদেরে আখের গোচানো চর্চা করে, সেটা তৈরি করে মানুষের স্বস্তির নিশবাস কিংবা ক্রমাগত সংগ্রামের পিচঢালা পথ। এসব ভাবনা কবি’কে ক্রমাগতই চিন্তিত করেছেন, ভাবনা তাড়িত সময়ে দিন যাপন করতে হয়েছে, হচ্ছে যা পুরো কাব্যগ্রন্থ জুড়ে তার ছাপ দেখা যায়।
একজন কবি’র কবিতা লেখার পেছনের গল্পও উঠে এসেছে তার কাব্যে। নানামুখী দ্বন্দ্বে কবি জড়িয়ে পরে যখন একটি কবিতার জন্ম দেয়। সে দ্বন্দ্ব নিজের সাথে, পারিপার্শিকতার সাথে, সমাজের গতাগতিক ভাবনা ও জীবনাচরনের সাথে, “কবিতা নয়-সতীন কাটা” কাব্যে-
যেন যুদ্ধ জয় করে এলেন, অফিস ফিরে
একটু চা-মুড়ি গিলে
বসে গেলেন পিন্ড পাকাতে
কবিতা লিখতে, যত্তোসব ন্যাকামি
বাপের জন্মে এ সব দেখিনি।
জন্ম-মৃত্যু কে ঘিরে সমাজের নানামুখি সংস্কার, চাপ, কিভাবে একজন নারীকে, এক নবজাতকপে পিষ্ট করে তথাকথিত সমাজ সেবকরা, তাও ফুটে উঠেছে তার কবিতায়, এক চরম কষ্টের দীর্ঘশবাসে। “জন্ম কোথায়” কাব্যে-
পাপ ! পাপ ! পাপ কারে বলে
পাপেই তো জন্মেছি তমসা আঁধারে
ক্ষুধার অন্ন করতে জোগাড়
ইজ্জত দিয়েছিল জননী আমার
তাই তো জন্ম এই আলো আধারের শহরে।
কাব্যগ্রন্থটির সবকটি কবিতা যেমন স্বতন্ত্রভাবে নানামুখী ম্যাসেজ দিয়েছে আবার একটি কাব্য অন্যটির সাথে একসুতোয় বেধে সামগ্রিকভাবে একটি শক্তিজাল তৈরি করেছে তথাকথিত সমাজের অনাচার, অত্যাচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ক্যাভাস কাব্যগ্রন্থটি সমাজ সচেতনতা তৈরিতে অবশ্যম্ভাবীভাবেই একটি প্রভাব রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
৯৭টি কবিতার শিরোনামঃ
• কে তুমি
• ন্যাংটো শিশু”
• পুতুল খেলা”
• বেলা অবেলার কথা
• আধারের কাব্য
• জন প্রতিনিধি
• স্মৃতি
• এসো গাই বাংলার জয়গান
• তিলোত্তমা
• স্বপ্নের ছায়া তলে
• এই ছেলে
• প্রেমের অপমান
• ওই বয়সটাই পারে
• সবাই ভুলে যাবে
• সংক্ষিপ্ত ভাবনা
• টাকা-মন
• লাগ ভেল্কি লাগ
• রত্নগর্ভা
• উষ্ণ নিঃশ্বাস
• পৌষের গন্ধ
• উদাসী মন
• সংকেত
• কোথায় গেলি তুই
• বর্ষা সুন্দরী
• মুগ্ধ তোমার রূপে
• এ কি করলে জননী
• শনিবারের বিকেল
• বাংলা প্রেম
• জন্ম কোথায়
• দোয়া কর
• কবিতা নয়, সতীন কাটা
• বৃষ্টি ভেজা শীত-রাতের অভাগ্য
• যদি চলতেই থাকে
• কি কইলেন
• গোল্লাছুট
• চল বেরিয়ে পড়ি
• আমার আমিতে ভেসে
• ভালোর গুন্ডামি
• ধূসর দিনলিপি
• বিকিয়েছি বিনা অধিকারে
• সভ্যতার আকাশ
• বেশিতো চাইনি
• নীলে এখন শুধুই বালি
• শুধুই খুঁজে গেলাম
• ভালোবাসার খোশ বাগ
• বেলা যায় গো
• বাগিচায় ফুটবে না ফুল
• কনকচাঁপা
• কি নামে ডাকি
• তুই না ছেলেমানুষ
• সুধীজন হিতায়েচ
• ঘর যাবুনি
• একটি কবিতার জন্ম
• এ বড় লজ্জা
• একটাই বাদ যাক
• মাগো কারে কই
• বসন্তের আগমন
• প্রবাসী প্রেম
• প্রথম কথা
• সো হা গ
• প্রেমের উপস্থিতি
• কিছু স্বপ্ন আশা
• ব্যথার যমুনা
• একে একে দুই
• তুমি কি পারো না
• প্রিয়তমা গো কথা শোন
• স্তব্ধ দুপুর
• কৃষ্ণার বাঁক
• শালের বনে
• আলপথ
• তুমি সন্দর
• মন মালি
• দেরী করে এলে
• উষ্ণতার জন্য
• হেমন্তের অমাবস্যা
• বিবেক তুমি ঘুমোও
• আলো না অন্ধকার
• মুখোশ আর মহাখোশ
• যাবি কোথায় দ্রউপদি
• এই মেয়ে কথা শোন
• ওরা কি করছে বাবা
• দুঃখ আমাকে অনেক দিয়েছে
• মন বসে না বইয়ের পাতায়
• আর একটা কেন মন দিলে না
• ফুলদান
• কেন বলতো
• কাঙ্গাল কথা-১
• কাঙ্গাল কথা-২
• কাঙ্গাল কথা-৩
• ফাগুনের গান
• বসন্ত রঙ
• ক্যানভাসে
• কবিতা নয়
• বোকা পাখি
• যা ছুটি দিলাম
• সরাইখানা
• মমতাময়ী