আলোচনা ১০৩
ভেতর থেকে ঊঠে আসা এক দহনের আকুতি, ক্রমাগত নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার বহিঃপ্রকাশ, নিজের অক্ষমতায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া এক সন্তানের অভিব্যক্তি। মা’ এমন একটি শব্দ, এমন একটি ইমেজ, এমন একটি সম্পর্ক যাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে পৃথিবীর কোন সন্তানই সঠিক ভাষা, সঠিক শব্দ খুঁজে পায়নি । তন্ন তন্ন করে ডিকশনারি খুঁজেও সঠিক উপলব্ধি এবং অভিব্যক্তিকে প্রকাশ করার সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। মা’কে নিয়ে হাজার পৃষ্ঠা, লক্ষ পৃষ্ঠা লেখার পরও অপূর্ণতা থেকেই যায়। পৃথিবীর কোন লেখক, কবি, সাহিত্যিক কেঊ-ই পূর্ণ হতে পারেনি। কবি জুনায়েদ বি. রাহমান ও পারেনি, তার কবিতা “আমার মৃত্যু কামনা করো মা’তে সেই অভিব্যক্তিই ফুটে উঠেছে নিখুঁত ভাবে।
মায়ের অসম্মান, মায়ের অবমাননা কিংবা মাকে নিয়ে কটূক্তি সহ্য করা কোন সন্তানের পক্ষেই সম্ভব নয়। পৃথিবীর সমস্ত শক্তির বিরুদ্ধে গিয়েও সন্তান তার মায়ের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত থাকে, মা’এর যে কোন প্রকার কালিমা মুছে দিতে সদা প্রস্তুত থাকে সন্তান। সেই মা’য়ের সম্ভ্রম লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে এক সন্তানের অসহায় আকুতি ফুটে উঠেছে কবিতায়। নিজের অক্ষমতায়, নিজেই নিজের মৃত্যু কামনা করেছে, মায়ের দোয়া সফল হয় বলে, মায়ের কাছেই আকুতি জানিয়েছে তার মৃত্যুর জন্য ।
কি এক অসহায় আর্তনাদ ফুটিয়ে তুলেছেন কবি তার কবিতায় যেখানে সন্তান তার মায়ের সম্ভ্রম লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে দাড়াতে পারছে না, রুখে দিতে পারছে না। নিজের অক্ষমতা, নিজের ব্যর্থতা আর সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় টিকে থাকা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের অসহায় অবস্থানে নিজেকে মৃত মানুষ, মৃত আত্মার সাথে তুলনা করেছেন। বেঁচে থাকা মানুষের নুন্যতম ক্ষমতা থাকে মায়ের সম্মান রক্ষা করার জন্য কিন্তু সেটুকুও যখন কোন সন্তানের না থাকে তখন তাকে আর মৃত বলা ছাড়া উপায় থাকে না। অযোগ্য সন্তান, অক্ষম সন্তান মায়ের কাছেই শেষ প্রার্থনা করেছেন, সে যেন প্রতিবাদি হয়ে উঠতে পারে, মানুষ হতে পারে, তার মৃত্যুটা যেন কোন মানুষের মৃত্যু হয়।
কবি, মৃত আত্মা, প্রতিবাদী হওয়া, মানুষ হওয়া ইত্যাদি শব্দ রূপকের মাধ্যমে ব্যবহার করে বর্তমান সমাজ বাস্তবতাকে কষে চড় দিয়েছেন। মা’য়ের সম্ভ্রম লোপাটকারী চিত্রের মাধ্যমে চমৎকারভাবে সমাজের চূড়ান্ত অবক্ষয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। অল্প কথায় অসাধারণ এক ব্যঞ্জনায় প্রতিবাদী কবিতা রচনার জন্য কবির প্রতি রইলো রক্তিম শুভেচ্ছা।