অরণ্য -স্তব্ধ-ঘাতে, কুহেলীর পথে পথে কত স্বপ্ন আসে;
আমার ঘুম ভেঙে যায়  -
দীপ-নেভা রাতে -অধর চুম্বন প্রেয়সীর মাথে,
উষ্ণ বুকে মুখ রেখে স্বপ্ন সহচরী হয়ে  যদি সব ভেসে যায়  
তবে তাই হতে দাও ।

কত বর্ষান্তের শেষে , মন মাধুরী লুটায়ে ঘাসে,
দেখেছি ফুলের বুকে কত শিশির –রোদের গোপন প্রণয় খেলা ,
কত  আসে কালো ভ্রমর, কত গুঞ্জন মেলা ,
দেখি নাই আরও গভীরে, লেগে থাকে নিবিড়ে
কত রক্তের দাগ, কাঁটার আঁচড়ে নির্মম অবহেলা ।

নিঝুম নীল নদীর তীরে, নিস্তব্ধতার ভীড়ে
কত নিশিভোর, জাগায়ে ঘুমঘোর,
ভুলায়ে ম্লান, নির্ভীক প্রাণ, বিজয় স্বপ্ন -সাক্ষ্যে
অন্ধ মুদিত নয়ন ,তৃষিত চুম্বন, তোমার নিশীথ -বক্ষে,
তোমার চোখের নীলাভ আলোর অবগুণ্ঠন সরায়ে,
তোমার ভূ -লুপ্ত আঁচল শিউলি ,পলাশ ,বকুল ভরায়ে,  
কত বার অমরায় গেছি আমি নীল পদ্মের খোঁজে ;
কত  পাই, কত হারাই ,অবুঝ মন-ই শুধু বোঝে ।

এই  অবেলায়, ভাসায়ে  ভেলায়,
কত  দুরাশার ভয়ে, বিলম্বিত-লয়ে ,নাও আমার অপারে ভেসে যায় ।
নেমে যায় জোয়ারের জল, থেমে যায় প্রাণ-কোলাহল,
পরে থাকা ছেঁড়া ,বালুময় ঘেরা ,স্বপ্ন শতদল ।
সন্ধ্যা এলো ঘিরে ,এক পাখী ফিরিতে পারেনি ঘরে,
কখনো হারিয়ে যাওয়া কলরব -সাগর তীরে
কখনো গভীর শূন্যতার ভীড়ে,
আশা নিয়ে মরে আকাশ পাড়ে –আবার আসিবে ফিরে
তোমার ওই ছোট্ট নীড়ে ।
নির্বাধন হৃদয় -বিদারণ মোনারণ্য -পথে, ছায়া ভীড় করে থাকে,
মাথা  নত  হয়ে জীর্ণ ঘাসে  কত ছবি আঁকে ।  
আজও সেথায় সন্ধ্যা হলে, ক্লান্ত হাওয়া কীযে বলে,
ঝরে  পড়া  শুখনো পাতার  কানে -মুখ  বাড়িয়ে শোনে
কিছু বোঝে, কিছু বোঝে না তায়,
যত টুকু বোঝে তারে, বিরহের করুন বাঁশীর সুরে  
বোঝার যন্ত্রণার অনাদৃত অনন্তে -
নিস্তরঙ্গ তরণীতে পারাবারে ভেসে যায়।
সেই বিরহের তারে  
আজও চোখের পাতায় ভেজা শিশির বন্ধ দ্বারে কড়া-ঘাত  নাড়ে ।

একাকী নিশি -রাত, অসময়ের  পদাঘাত-
ধূসর চাদর পাতে, আলোর অজ্ঞাতে, মেঘের কিনারায়,
কার ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস ঝরে আমার ভেজানো জানালায়,
শুধু চেয়ে থাকে মুখ -পানে সেই মুখ-খানি
লজ্জাহীন সান্ধ্য -প্রদীপ এখনো নেভে নি ।
শুরুতেই লাগে নাওয়ে আমার শেষের পালের হাওয়া,
মিলনের আলোর নীচে আজও পড়ে এ কোন বিরহের ছায়া !  
দিনের আলোয় হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আজও দাও নি সারা
মৌনময়ী কে দাঁড়িয়ে থাকে ,হাত-ছানি দিয়ে ডাকে ,
আমার বন্ধ দ্বারে, নিশি -রাত প্রহরে, কে নাড়ে কড়া ?