বৃষ্টি কাঁধে নিয়ে ওরা বসে আছে
মাথার উপর ছাতা
তারো উপরে যে ঝাড়ু গাছ
তাতে শহরের কাঁক গুলো ভিজছে
বৃষ্টি উৎযাপন যেন চলছে ওদের।
করই গাছের ডালের উপর
যে মাটির হাড়ি
তাতে বাসা বেঁধেছিল শালিক
সাদা কালো শাকিল।
দিঘির জলে বৃষ্টি ফোঁটার ডেউ নিয়ে
তাকিয়ে থাকা শুধু ওদের
তেরো দিনের বাচ্ছা ওরা।
পাশেই ক্যান্টিন
পৌর পার্ক ক্যাফেটেরিয়া
জানালা গলে ওরা তাকিয়ে আছে
হাতে ধরে আছে পাইপ
খাওয়া হচ্ছেনা ওদের
বিষন্নতা যেন গ্রাস করেছে
ওদের চোখ জুড়ে, অন্তর জুড়ে।
অথচ কত কাছেই ওরা
চাইলেই ছুঁয়ে দিতে পারে
হাতে হাত রেখে বলে দিতে পারে
ভালোবাসি।
পানি উঠা রাস্তা মাড়িয়ে
আমার হেটে চলা
পিল পিল পায়ে, সন্তপর্ণে।
আমার কোন ইচ্ছে নেই
নির্দিষ্টতা বলতে যা কিছু
তা আমার ইষৎ ঝাপসা
মন হাতড়ে হেঁটে চলা
পুরনো রাস্তা হয়ে।
এদিকে হাঁটছি
হাঁটতে হাঁটতেই ঢুকে পড়েছি
পুরনো হস্পিটাল রোড হয়ে
অনেক দিন পা না পড়া লক্ষিনারায়ন পুর।
ভাবছি এ কি করে হয়
পুরনো হস্পিটাল রোড
এক দম বিপরীত
নামটা ভুলে উঠেছে নিশ্চয়
আমাদের মনে যেমন জন্ম নেয়
ভুল কিছু সম্পর্ক কোন নাম না রেখেই।
তবু কিছুটা ইচ্ছে ছিলো
এদিকে এসে পা ডুবিয়ে হাঁটবো
বৃষ্টি হলেই এক সময়
কোমর সমান পানি ছিলো
এখন আমার হাটু অবদি হওয়ার কথা।
নাহ, তা নয়
নতুন রাস্তা হয়েছে
উচু করেই রাস্তা
নানুর কবরটা অনেক নিচে
তবু পানি উঠেনি এখানে
আসপাশেই হয়তো ড্রেন হয়েছে
পানি গুলো নামে যাচ্ছে
এই গলির মানুষ গুলোর
মনের যত আবর্জনা নিয়ে।
এইযে বাড়িটা
আন্টিদের ছিলো
বিক্রি করেই চলে গেছেন
শহুরের জীবণ ছেড়ে
যেন পালিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচা।
পাশেই তিন তলা বাসা
বহু দিনের পুরনো
এখনো জীর্ণতা নিয়ে দাঁড়িয়ে
তবু লিখা আছে "করবী"
সামনেই দুটো কৃষ্ণচূড়া গাছ
ফুল নেই, মৌসুম ও নয়।
হয়তো ফুল ফুটলেই
জুড়ে যায় নতুন নাম
"রক্ত করবী"।
যদিও কৃষ্ণচূড়ার রঙ রক্তের মত নয়
তবু বাড়ির বৃদ্ধা হয়ত
বয়স কালে প্রেমিকার নাম রেখে ছিলেন
চিঠের খামে ভালোবাসা নিয়ে লিখতেন
"ভালোবাসা রইলো প্রিয়তী"
সে চিঠি হয়ত পৌছুত না
মনের মাঝে রক্ত রেখে
বাড়ির নাম দিয়েছেন ভীষণ আক্ষেপে
"করবী"।
আর না দাঁড়িয়ে
হেঁটে এসেছি, সামনেই রেল লাইন
কোন দিকে ছুটব
উত্তর নাকি দক্ষিণ
গন্তব্যহীন ইচ্ছে আমার
তাই বিপরীতে হাঁটা ধরেছি
রেল লাইন ধরে।
পাথর গুলো খট খট আওয়াজ করে
পায়ের নিছে পড়ে যে চিৎকার
তবু খুব নরম সুরে
যেন আমার মতই ওরাও।
অপেক্ষায় থাকে
হুইসে শুনার অপেক্ষায়
কখন ছুটবে ট্রেন
ওদের নিরবতার বুক ছুয়ে।
সামনে খোলা প্রান্তর
না খালি নয়
জমে গেছে ঘাস
পানিতে টইটুম্বর গাঁ যেন
তার পাশেই ষ্টেশন।
শত বছরের বৃদ্ধ করই গাছ
দাঁড়িয়ে আছে সাক্ষী হয়ে কালের।
একটু সামনে গেলেই
আমি ফিরে যাই যেন পিছনে।
ওর সাথে আমার দেখা
শেষ দেখাটা হয়েছিলো যখন
তখন আমি সবে স্কুল চুকিয়ে
পড়তে শুরু করেছি কলেজে,
সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরে
সাইকেল দৌড়িয়ে
ওদের বাসায় গিয়ে ছিলাম মনে পড়ে
কাক ভেজা হয়ে, বৃষ্টি ছিলো।
অনেক দিন পর দেখা
আমাকে দেখেই যেন দেখে ফেলেছে
গত কয়েক শতাব্দির সকল আচার্য।
এরো আগে আমাদের শেষ দেখাটা ছিলো
পুলিশ লাইনের সপ্তম শ্রেণীতে।
অথচ আমরা একে অপরকে চিনি
চেনা জানা সেই ক্লাস থ্রি থেকে।
একই বেঞ্চে বসার জন্য কত কি।
হুট করেই উদাও হয়েছিলো সে।
এমন করেই আমি
নিয়ত প্রতিটা সময় খুজে বের করি।
তার পালিয়ে বেড়ানোর অভ্যেস খুব।
যশোরে বাড়ি ছিলো
এখানে নিত্যান্তই বাবার চাকরি।
সেই যে দেখা হয়েছিলো
আর হয়নি শেষ দেখা টুকু
পালিয়ে বেঁচে গেছে যেনো
আমি আর খুঁজে পাবনা জেনেও
পালিয়েছে জীবণ বেঁচে দিয়ে
রেল রাস্তায় কাঁটা লাশ হয়ে।
আমি যখন জানি,
তখন আরো এক বছর গত হয়েছে
ওর বাসায় না ছুটে গিয়ে
আমি ফুল দিয়ে এসেছিলাম
যেখানে যে শেষ নিঃশ্বাস রেখেছিলো।
সারোরারা,
আমার সাথে নামের খুব মিল ছিলো
হয়ত আমার যৌবনের প্রথম কেউ
যাকে আমি ভালোবেসেছি
তার মৃত্যুরও অনেক পরে।
সন্ধ্যে ঘনিয়ে,
বৃষ্টি আবার নেমে পড়েছে
আসেপাশে কোন বুনো ফুল নেই।
আমার পা চলছে না।
তবু ফিরতে হবে
এই ইষ্টিশনের চত্তর ছেড়ে
পা বাড়িয়েছি
শরির থেকেও যেন
পায়ের বয়স বেড়েছে কয়েক গুন
চাইলেই সামনে ছুটেনা
পেছনের শেকলে আটকে থাকে
তবু চলা।
পিছনে পড়ে আছে সারোয়ারা
সামনে আগামি
মনের কোণে অভাব
জীবনের কোণে বিষন্নতা
পিছুটান হয়ে ধূসর অন্ধকার।
ঝুম বৃষ্টি,
ছাতা বন্ধ করে আমি হাটছি
ফিরে চলা শহুরে রাস্তায়
শিকলে বাঁধা নিয়মের আস্তাবলে
অবিরাম আমার এ ছুটে চলা
খুব গোপনে
নিঃশব্দে, নিঃসঙ্গতায়।
ভালো থাকিস, সারোয়ারা।