তোমায় গড়বো বলে --
পৃথিবীর সব শব্দ থেকে সরে বধির হয়েছি
ধরণীর সব দৃশ্য থেকে চোখ সরিয়ে অন্ধ হয়েছি
বিশ্বের সব বিস্ময় বিস্মৃত হয়ে বাকরুদ্ধ থেকেছি।
কবিতা তুমি পার্থিব হবে নাকি অপার্থিব
আমি জানিনা তা--
বিনিদ্র প্রহরে তুমি তান্ত্রিকের তপস্যার মতো
একাগ্রতায় নিমজ্জিত করো আমাকে।

আমি স্রষ্টা নই
আমি কেবল মহাস্রষ্টার অনুগ্রহপ্রাপ্ত
এক নগণ্য অনুবাদক--
ভাবনার,দুর্ভাবনার,সুখের,দুখের
দৃশ্যের কিংবা অদৃশ্যের।
সৃষ্টির সংকল্পে আমি অনিয়ন্ত্রিত আবেগকে
আবদ্ধ করেছি শব্দের শৃঙ্খলে।
আমি পর করে দিয়েছি নিজেকেই মনের ঘর থেকে
অন্য অনেক বিচিত্র চরিত্রের কোলাহলে
প্রকম্পিত হয়েছে মগ্ন মনোভূমি --
আমি দেখার বাইরে শিখেছি দেখতে
মহাকাশ থেকে দৃষ্টি ফেলেছি পাতালের অতলে
মনের ছায়াকে দেখেছি বিস্ময়ের বিকিরণে।
শুষ্ক মরুর বুকে কান পেতে শুনেছি সমূদ্রের গর্জন
আকাশের বিস্তারে দেখেছি স্বর্গীয় মরুদ্যান।
শহুরে দেয়ালের দংগল ভেদ করে আমি ছুঁয়েছি
বনানী বৃক্ষলতাপাতাকে
আমি গ্লেসিয়ারের চূড়ায় দেখেছি
আগ্নেয়গিরির তপ্ত লাভার নাচন।
পরম প্রিয় হয়ে উঠেছে আমার কাছে পৃথিবীর তাবৎ পরমাণুই --
ভাষাকে ভালোবেসে আমি ভাবনায় ভুলেছি বাস্তব-
সংকট, ভয়, ভগ্নদশা।
কাব্যের চরণে আমি বরণ করে নিয়েছি মরণের মহিমাকে--
জীবনের গহিন গন্তব্যে দেখেছি প্রাণের প্রশান্ত প্রস্থান--
আবার দেখেছি---
জীবনের জয়গানে মুখরিত জীবিত জীবেদের
উজ্জ্বলতায় দীপ্ত মহাকালের ছায়াপথ।
সৃষ্টির সাধনায়, মনের মন্ত্রণায়
আমি স্বপ্নকে স্পর্শের স্পর্ধা দেখাই।

তোমায় গড়ার গর্বে... হে কবিতা
আমি সর্বস্বান্ত হই।
বিনিদ্র রাত্রির যাত্রী আমি
নির্দোষ প্রদোষে অহেতুক অহমিকার অনুতাপে
আমি সর্বস্রষ্টার সমীপে হই নতজানু ---

শুধু আমায় তুখোড় সুখে ভাসানো এ স্বরলিপি,
এ নগণ্য কাব্যকথা অব্যয় হতে চায়........
এ অনাদিকালের অবনীর বুকে।।