সকাল সকাল উঠে কাজের স্রোত ঠেলে মনে মনে তৈরী হচ্ছি আজ আগেভাগে বই মেলায় আমি পৌঁছবোই । এর মধ্যেই কবি মহিউদ্দিন মাসুমের ফোন , ‘ভাই আপনি কই আমি রওনা হয়ে গেলাম ।‘ কিন্তু কবি ভাবে এক ভাগ্যে থাকে আরেক, মাঝখানে কি ঘটলো তা আর বলছি না , ওটা ভবিষ্যতের ছোট গল্পের মশলা হয়ে থাক , আমি অবশেষে মেলায় পৌঁছলাম , বেলা আড়াইটা নাগাদ । এর মধ্যে হুমায়ূন ভাইয়ের বারংবার কল আসছে যাত্রাপথেই , মনে মনে উনি আমার চৌদ্দ পুরুষকে একহাত নিচ্ছেন , অন্যদের হয়তো বলছেন , “দ্যাখো এঁরা কেমন আমাকে গাছে উঠিয়ে মই নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ।“ কবিদের আমি পেলাম “ পাঠকের আড্ডা “ নামের স্টলে --অনেকেই ব্যস্ত বইয়ে মোড়ক লাগাতে , সাবলীল মনির ভাই র‍্যাপিং পেপার লাগাচ্ছেন ,তো মোঃ রুহুল আমীন টেপ লাগাচ্ছেন -ইনি এসেছেন দূর শহর থেকে ,উঠেছেন হোটেলে , কি নিষ্ঠা ! আছেন কবি কামাল , ব্যাস্ত আরো কবীর ভাই , মাসুম ভাই , আর স্বপ্নছায়াকে নিয়ে দূর্বাসা লিটন । কবি শিমুল শূভ্র ফোন করলেন সেই মুহূর্তে ,  “ভাই , আমি অনেক দূরে ,আপনাদের জন্যে শুভকামনা ,সবাইকে জানিয়ে দিন ।”আমি তাৎক্ষনিক জানিয়ে দিলাম । শোনা গেলো ,কবি সুবীর কাশ্মীর পেরেরা ও নাকি সেই সুদূর আমেরিকা থেকে বার বার যোগাযোগ করে এই অনুষ্ঠান মিস করার দুর্ভাগ্যের কথা বলেছেন , সেই সাথে শুভকামনা এই আয়োজনের ।এক ফাঁকে আমি আর কবীর ভাই ছুটলাম মাইকের কাছে-- ঘোষনা দিতে হবে ,এক কপি বইও জমা দিতে হবে ওখানে । বইয়ের সাথে ইয়া বড় বড় টকটকে লাল গোলাপ ফুলগুলো পেস্টিং করে আমরা বাইরে বেরুতেই আমাদের অতিথি উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীব সাহেব এসে গেলেন , যারা জানেন না তাদের বলছি-- উনি প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক  হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই । বেশ সময় নিয়ে অতিথির সাথে আমাদের ফটো সেশান চলছে , এর মধ্যেই এসে গেছেন কবি খায়রুল আহসান , কবি রুহুল আমীন হৃদয় , কবি নাহিদ আক্তার ঝর্ণা । কবি আনিছুর রহমান প্রথম দিকে এসে সবাইকে চকলেট ধরিয়ে দিয়ে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলেন জানি না , তাকে আর দেখলাম না  মঞ্চে উঠার আগের ফটো শ্যুটের সময়--পরে অবশ্য মঞ্চে তার সরব উপস্থিতি ছিলো। মঞ্চে তুমুল ভীড় , আমরা কোনমতে ঠেলা ঠেলি করে জায়গা করে অনুষ্ঠান শুরু করলাম , সাথে করে আনা খুব সুন্দর আমাদের আসরের রং ,লোগো ,বইয়ের প্রচ্ছদ ছাপা ব্যানার এর মধ্যেই এক ফাঁকে মাথার ওপর টাঙানো হয়ে গেলো --লেখা আছে তাতে 'দুই বাংলার কবিদের ভালোবাসার কবিতা ' -লাইনটাও ।প্রবল উৎসাহে আট-দশ খানা বইয়ের মোড়ক ফরফর করে খোলা হলো --বিকশিত হলো দুই বাংলা আর প্রবাসী বাঙ্গালী কবিদের স্বপ্নের আয়োজন , ভালোবাসার পুস্পিত পত্র “শতরূপে ভালোবাসা” বাই বাংলা কবিতা ডট কম । চ্যানেলের ক্যামেরা এসে গেছে , প্রথমেই বইটি সম্পর্কে বললেন কবীর ভাই । এরপর আমাদের অতিথি আহসান হাবীব বললেন তার সুন্দর বক্তব্য । এই সময়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করছিলেন এক কবি ( নাম মনে নেই ) , তিনি আমাদের সব কবিকে আমন্ত্রণ জানালেন সামনের মাসের প্রথমে বাংলা একাডেমীতেই স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে। সাথে আনা মিষ্টি বিতরণের হুকুম দিলেন কবীর ভাই --আমি পিছনে পড়ে গেছি, পেলাম না । দারুন ‘রস কদম্বের' লোভনীয় ঈশারা আমাকে দিশেহারা করে ফেললো । সবাই নামছে মঞ্চ থেকে , দেখলাম শুধু সাবলীল মনিরের হাতেই এখনো মিষ্টির অর্ধেক আছে , আমি আছড়ে পড়লাম ," ভাই , আমিতো পেলাম না ।" মনিরভাই আমার ফাজলামীর ধার ধারলেন না , সিরিয়াস মুখ করে আমাকে বাকী অর্ধেক মিষ্টি খাইয়ে ছাড়লেন। এই শেয়ারিংটা খুব আন্তরিক লাগলো।
এই মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ থেকে আমাদের প্রকাশনার স্টলে যেতে হয় এক রাস্তা পার হয়ে উলটো দিকে --আমরা সেখানেই আবার মিলিত হলাম ,আবার ছবি তোলা আর বই কেনা । উন্মাদক আহসান হাবীব অনেকক্ষণ কাটালেন আমাদের সাথে । স্টলের সবাইকে মিষ্টি দিয়ে আমরা ছুটলাম বাইরে ,চায়ের খুব তেষ্টা পেয়েছে। কবি খায়রুল আহসানের সৌজন্যে চা খেতে খেতে আমরা আলাপচারিতায় মগ্ন হলাম । অনেকের তাড়া , অনেক দূরে যেতে হবে --গড়িমসি করে করে আসরটা এক সময় ভাঙল ।
আমার বিশেষ প্রাপ্তি ছিলো আসরের এক সময়ের আলোড়ন তোলা “ সৌখিন কবিতা পাঠকের” সাথে আলাপচারিতা , ফোনে না সাক্ষাতে, বলছি না তা --নিভৃতেই থাক সে।
পলক ভাইকে খুব মিস করেছি আমরা , তাজুল ভাইও কোথায় যে গেলো ?
আমরা সবাই কৃতজ্ঞ আমাদের সুপ্রিয় এডমিন কবি পল্লবের কাছে ---এই অমলিন সুন্দর দিনটা , এই মধুর উপলক্ষ্য যে তারই দরদী উপহার ।
ফিরছি এক সম্পূর্ণতার অনুভব নিয়ে , আমরা কবি --বাংলা কবিতা ডট কমের কবি ।
আমাদের সম্মিলিত প্রচেস্টার প্রকাশ আছে --আছে প্রেমের অমলিন সৌন্দর্য্যের শব্দ-ফুল সুবাস মাখা মলাটবন্দী “শতরূপে ভালোবাসা "।