বেদনার বিশ্বায়ন
..........................

ওপেন টেরেসে বসে আছি আমরা মুখোমুখি
আমার সামনে অপরূপা এক নীল-নয়না শ্বেতাঙ্গিনী
ছোটো টেবিলটার দু'পাশে দু'খানাই চেয়ার।
এভাবে এখানে প্রেমিক-প্রেমিকারা বসে
দীর্ঘালাপে মশগুল হতে........
আমরা নির্বাক, ভাষার ব্যবধানের দেয়ালে পিঠ রেখে
আমরা পরষ্পরের দিকে অর্থহীন তাকিয়ে.....
আর কোনো টেবিল খালি না থাকায় এই অস্বস্তিকর অবস্থান।

সে কিছু বলেছিলো, আমি বুঝিনি,
আমিও বলেছিলাম কিছু সে বুঝেনি,
শরীরী ভাষার সৌজন্যটুকুই শুধু অনুমানযোগ্য।

হঠাৎই কাছে বিস্ফোরণ......
সবার দিক্বিদিক  ছিটকে পড়া--হুলুস্থুল এক হুড়াহুড়ি
মাটিতে সটান শুয়ে কেউ, কেউবা টেবিলের তলে,
আমরা হতবিহবল দু'জনেই এখন দাঁড়িয়ে পাশাপাশি
চোখে বিরাট প্রশ্নবোধক.....নগ্ন আতংক মিশে আছে তাতে

এবার গুলির গর্জন........
অচেনা সঙ্গী আমাকে সজোড়ে আঁকড়ে ধরেছেন
ফ্যাকাশে ঠোঁটে আতঙ্কের উচ্চারণ......
সাহস যোগাতে তার কম্পিত কর দৃঢ় মুষ্টিতে নিয়েছি,
চোখের ঈশারায় সান্ত্বনার ভাষা--নিরপত্তা দেয়ার প্রত্যয় আমার।

অবিশ্বাস্য তৎপরতায় কিভাবে যেন বেরিয়ে এলাম আমরা নিরাপদ দূরত্বে,
তখনো তার কম্পমান কব্জি আমার মুষ্টিবদ্ধ।
কাঁপছি আমিও......

দু'জনেই নিষ্পলক তাকিয়ে সামনের ধ্বংসযজ্ঞের দিকে
নিথর মানুষের পাশে রক্তের স্রোত গড়িয়ে চলেছে........
পরষ্পরের ভাষা না জানা এক এশীয় আর এক ইউরোপীয়
নির্বাক বেদনাহত, অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখছি........
মানবতার মৃত্যু.......

নিজেদের বেঁচে ফেরার চেয়ে এখন অন্যদের করুণ, মর্মান্তিক পরিনতিই
যেন শোকার্ত করে তুলেছে আমাদের।

এই ব্যথা বিশ্বজনীন
কোন ভাষারই প্রয়োজন হয় না তা ব্যক্ত করার জন্যে......