অতীব সাদা-মাঠা জীবন ছিলো তাঁর
শাহানশাহ্ -এ আলমগীর ।
দিল্লী পতি হয়েও যিনি, না লইত
রাজ কোষাগারের কোন অর্থ ।
বরং টুপি সেলাই আর কোরআন নকল
এই দুটো ছিলো, তাঁর সম্বল কেবল ।
যা উপার্জন হতো এখান থেকে
তাই দিয়ে দিন গুজরান কোন মতে ।

একদা পন্ডিত দরবারে হাজির প্রায় দ্বি-প্রহরে
কুর্নিশ করি শাহানশাহে, বলেন সবিনয়ে
কিছু অর্থ-কড়ি যদি দিতেন দয়া করে
মেয়েটি আমার বিয়ে হবে তাই
কোথাও আর কোন উপায় না পেয়ে
এসেছি সাহায্যের তরে, আপনার দরবারে ।

মুঘলদের জ্যোতি, দিল্লীর পতি
ছিলেন অতিশয় একজন মহাজ্ঞানী ।
তাই রাজকোষের অর্থ না দিয়ে, দিলেন
নিজ উপার্জন থেকে, অবশেষ কড়ি ।

ক্ষুব্ধ মনে কড়িটি নিয়ে, পন্ডিত এবার বাড়ির পানে
যেতে যেতে ভাবে, ভদ্রতা কি তবে গেছে ভুলে !  
দু’দিন আগে যাকে পড়াতাম কৈশোরে
দিল কোন মুখে, একটি কড়ি প্রিয় শিক্ষককে ।

হঠাৎ পথে বড় মাছ হাতে, সম্মুখে এক জেলে
বলে পন্ডিত, নিতে পারো, কড়ি দু’চার পেলে
ভাবে পন্ডিত, হবে না কিছু এই সামান্য কড়ি দিয়ে
তাই সুধালো তাকে, দিবে কি তুমি এটা একটি কড়িতে ?
জেলেটি ছিল বড় ক্লান্ত, বাজারও অনেক দূর
শুনে দেরি আর না করে দিল, মাছটি হাতে তার ।

বাড়ীতে সেদিন, ঘটেছিল অদ্ভুত এক কাণ্ড
মাছের পেটে কোথা থেকে এলো, অলৌকিক রত্ন
দুপুরে খেতে বসে পন্ডিত, বিবির মুখে শুনে অবাক
পরে হলো আরও আশ্চর্য, দেখে তার ঝলক !

জহুরী জহর চেনে, আসল-নকল ভেদে
অপরাহ্ণে তাই পন্ডিত চলে, জহুরীর পানে
দেখে জহুরী বলে পন্ডিত, মূল্য যা চাও পাবে
তবুও এই রত্নটি যে, দিতে হবে মোরে ।

পরদিন প্রাতে: পন্ডিত, পুনরায় দরবারে
বলেন জাঁহাপনা, ক্ষমা করবেন মোরে
বিরক্ত করতে আসেনি, আমি আপনাকে
শুধু সুধাতে, কি ছিল কাল ওই দানের কড়িতে ?

মুচকি হেসে এবার উত্তর, শাহানশাহে
ভেবেছিলেন, সেদিন চিনিনি আপনাকে ?
শিক্ষক সেতো প্রিয় সবার, আদর্শ মানবের
দিল্লী পতি ও নয় ঊর্ধ্বে, কোন শিক্ষকের ।
বাদশাহী নীতিতে চলি না আমি, বুঝাই কেমনে
গরিবী হালতে চলে সংসার, সামান্য রোজগারে ।

সেদিন আপনার অকস্মাৎ আগমনে
পেয়েছিলাম লজ্জা ! কেন শিক্ষক আজ দরবারে ?
তহবিলে ছিল একটি কড়ি, সেটাও দিই কেমনে
তবুও ভরসা আল্লাহর, যেন মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এর বিনিময়ে ।
হে পন্ডিতজী, হয়নি কি পূরণ, তব কড়ির অসিলায়
মেটানো কি যাবেনা এতে, প্রয়োজনীয় দরকার  ?