তোমার কৃষ্ণচূড়ার বন শিমুলের সারিতে মিশে
বসন্তকে জানাতো আহ্বান রক্তিম গালিচায়,
ফিকে হয়ে আছে আজো কিছু তার পুরাতন স্মৃতির খাতায় ।
মনে পড়ে সেই কাক ডাক ভোরে আশ্বিনের কালে,
মুখর ছিল যেদিন চাতালের শিউলিতল,
তুলতুলে সব হীরা কুড়ানোর ডাকে ছিলাম মেতে যত দামালের দল ।
বাড়ি থেকে দূরে প্রান্তরের ধারে, ছিল যত ডানপিটেদের আড্ডা,
ছিল বটের ঝুড়িতে ঝোলা দিনমান,
যখন সময়ের পেণ্ডলাম মাপেনি জীবনের গতিবিধি।
জামরুলের ডালে চড়ে, আকাশ ছোঁয়ার আজন্ম নেশা ছিল যত,
ঈর্ষা ভরা চোখে দেখেছি তাকিয়ে শুধু মাথা উঁচু করে,
দেবদারুদের আলিঙ্গন শাল-তমালের সাথে, আকাশের নীলে ।
তোমার সেই বনষ্পতির দল আজো আছে কি তেমনি?
বড় জানতে ইচ্ছে করে।
বিভূঁইয়ের জীবনপাট ঢাকে আমার ফেলে আসা দিন, যান্ত্রিক আচ্ছাদনে ।
রুঢ়তার ভিড়ে, দম নেয়ার ফাঁকে কোনো এক অলস প্রহরে,
হৃদয়ের কোঠায় কে যেন আওড়ে ওঠে সংলাপ, বিস্মৃতির পাণ্ডলিপি ঝেড়ে ।
নিলয়ের নদীতে জাগে মৃদু আস্ফালন, হৃৎপিণ্ডে লাগে টান
জোযন দূরের তোমার হাতছানি, আমার দুচোখে নামায় শ্রাবনের বান ।
জীবনের তাগিদ করে উৎপাটন অস্তিত্বের যোগাযোগ,
তোমার-আমার মাঝে, হে গর্ভধারিণী, ভূখন্ড আমার ।
প্রাণের কুঠুরি ভরা আকুতিতে,
খুঁজে ফিরি তোমায় শুধু ভাবনার গহীনে,
নিজেরই মনে বার বার ছুটে যাই ফিরে,
তোমারই স্নেহের ক্রোড়ে ।
হয়তো সহসা নয়, হয়তোবা কোনো অযুত আগামী পরে,
কোনো একদিন, মহাযাত্রার শেষে,
যদি মিলে ঠাঁই, হে মৃন্ময়ী, তোমার সোঁদা মাটির ঘরে ।
তোমার বাতাস-জলে একাত্ন হয়ে আমার বিশ্লেষিত অবয়ব,
যদি জোগায় প্রাণ কোন এক বিটপীর ভ্রূণে, আমারই শ্মশানের কোণে ।
জানব সেদিন, আসন্ন স্বর্ণকাল আমার অমরত্ম অর্জনের।
ভ্রূণের খোলস চিড়ে উঁকি দেবে অংকুর একদিন, আমারই অংশ হয়ে,
ধমনী জুড়ে তার বয়ে যাবে জীবনের নতুন জোয়ার,
পাতারা রইবে চেয়ে শ্যামল চোখে,
আর আঁকাবাঁকা যত শাখা তার, অজস্র পেশল বাহু মেলে
হবে উন্মুখ সোনালী সম্ভাবনার টানে ।
আমি গুনে যাব শুধু অপেক্ষার দিন, নতুন জন্মের আহ্বানে।
তারপর কোন একদিন, সেই জন্মান্তরের ভোরে,
অতিকায় দেহে হব আবির্ভূত, হয়ে এক সুবিশাল মহীরুহ ।
নেব নিশ্চিন্তির স্বাদ বল্কল জুড়ে, হাজারো রন্ধ্রভরে,
রইব আঁকড়ে তোমায় প্রাণপণে শুধু, সহস্র শিকড়জালে ।
অবারিত তোমার মেদিনী গহ্বরে ছড়িয়ে সেই জাল,
বাঁধবো আবার নাড়ির বাঁধন তোমার-আমার মাঝে, শিকড়ের সুকঠিন গাঁটে।
উৎপাটনের ভয় রবেনা কোনো আর,
নির্বাক বিস্ময়ে থাকবে হয়ে শুধু সাক্ষী মহাকাল ।