হারার মা, বলি ও হারার মা,
                       ঘরে আছো নাকি ?
কোথায় আছো, ছেলের মতো কি
                       তুমিও দেবে ফাঁকি।
এই সাঁঝবেলায়, বাগানে তুমি
                        বসে করছ টা কি ?
ওমা, এতো দেখি সবগুলোই
                       রক্ত করবীর ঝাঁকি।
তা বাপু, এখনকি তোমার এই
                        গাছ লাগাবার সময় ?
নাকি ছেলের অপকীর্তির খবরে
                        মনেতে ঢুকেছে ভয়।
চলো দেখবে চল, কি করেছে,
                        তোমার আদরের পোলা,
পুরোহিতের মেয়ে করবীর ইজ্জত
                         লুটেছে তোমার ভোলা।
ছিঃ ছিঃ বদমায়েশ ছেলেটা পুরো
                         গ্রামটা ছারখার করলে,
এমন অকালকূষ্মাণ্ড পোলা বল,
                          পেটে কি করে ধরলে ?
বলি এই সাঁঝবেলাতে আবার,
                    রক্ত করবী নিয়ে পড়লে,
কি আছে এতে এমন মধু গো,
                    বুঝবে ঘানি টানলে।
এইবারে বেশ হবে, যাবে সবে,
                          জেলের সাজা ঝেলতে,
ঢের ভালো ছিল, যদি জন্মের আগে,
                          ছেলেকে মেরে ফেলতে ।।    



ছিঃ ছিঃ দিদিভাই, একি কথা বলছ,
                        এরকমও কেউ বলে,
ছেলে দোষী বলে, আজ আমার
                        মমতাকেও দোষী করলে।     
দিদিভাই বলছ যখন, যাব আমরা,
                              মায়েরই ওই মন্দিরে,
করবীকেও বলব জেনো ওর আর,
                              কোনও ভয় নাই রে,
যা শাস্তি দেবে সবাই, বুড়োবুড়িতে,
                              তা মাথা পেতে নেব,
সন্তানের গর্বে বুক ফুলালে, অন্যায়ের
                              গিলোটিনেও গলা দেব।
এই দেখো রক্ত-করবীর গাছ,
                        যতদিন থাকবে এইখানে,
প্রতিক্ষনে ঝরবে রক্ত জেনো, আমার
                       বুকের ঠিক মাঝখানে,
যেটা সবাই চাইলে, মারতে পারি নি,
                       হারাকে আমি জঠরে,
মেরেছি হারাকে, আজ এই অবসরে,
                      মেরেছি আমার অন্তরে।
যবে হবে এই গাছে ফুল, তার জন্য
                      জেনো থাকবো অপেক্ষায়,
ফুল যত রক্তভেজা, ক্ষত গভীর হবে,
                       তত হারার ঐ কলিজায়।
কি করবে বল, ছেলে ছিল তার,
                       বাপেরই নয়ণের মণি,
তাই বাপ আজ অন্ধ হল, দুজনেই
                       শুধু মরণের দিন গুনি।
এইযে দেখ রক্তকরবীর চারা পুঁতেছি,
                       আমি ঠিক মাঝখানে,
মাটির নীচে হারা, আর উপরে তোমরা
                       শান্তিও পাবে সবখানে।  
মানুষ গড়তে চেয়েছিলাম, মমতা দিয়ে,
                        অকালকুষ্মাণ্ড ছেলেটাকে।
তাই বলে দোষ দিও না কখনো
                         কোন মায়েরই মমতাকে,
হয়েছে অমানুষ, মানুষ হয় নি, জানি
                        সবাই দুষবে দুজনকেই,  
ওর বাবার দোষ নেই, যত আছে,  
                        বিষ ঢাল শুধু আমাতেই
বলে দিও তোমাদের সমাজকে তাই,  
                        মা শুধুই মমতা নয়,
প্রয়োজনে শত করবীদের বাঁচাতে, মা
                        ছেলেরও ঘাতক হয় ।।
                              



**************************************

"মা" - নিয়ে আমরা সবাই লিখছি এই আসরে, তাই আজকে,  এক অন্যরকম মায়ের গল্প বললাম,  যদিও এরকম মায়ের সংখ্যা খুব কম এই পৃথিবীতে, কিন্তু তবুও আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যায়,  এই অসমসাহসী মায়েদের। সেরকমই এক সত্যি ঘটনার ছায়া নিয়ে লেখা আমার এই কবিতাটি।  কেমন লাগলো জানাবেন সবাই। মা - মানেই মমতাময়ী, স্নিগ্ধ ছায়া,  কিন্তু প্রকৃত "মা" মানে আবার- সন্তানের অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়ানো মা, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও তার অন্যায়ের বিচার করার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার আর এক নাম -  " মা " ..