ফেরিওয়ালা,
ও স্বপ্নের ফেরিওয়ালা !
তোমার কাছে সেই স্বপ্নটা আছে ?
যেটা তুমি দেখিয়ে ছিলে
সেই অচিন কালে,
ধানক্ষেতের পিছল আলপথ বেয়ে
ইস্কুল যাওয়া আসার পথে ?
সেই কোকিল-ডাকা চাঁদনী দিঘির পাড়ে ,
বকুল ঝরানো পথে,
চাঁপা ফুলের গন্ধে বিভোর হয়ে  
পথ চলা এক বালককে ?
যেটা বাসেদ সাহেব
মানুয় হবার মন্ত্রে দীক্ষিত করে ,
এক কিশোর মনে
গেঁথে দিয়েছিলেন ?

অবাক বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে
ফেরিওয়ালা জবাব দিল , -
কোথায় প’ড়ে আছ দাদু,
সেই আদ্যিকালের স্বপ্ন নিয়ে !
এখন এসেছে নতুন যুগ,
নতুন শতাব্দী ।
এখন মানুষ হবার নতুন মন্ত্রে
দীক্ষিত সব ছেলে মেয়ে,
দেশ গড়তে ব্যস্ত ।
চলেছে ধুন্ধূমার কাণ্ড ;
গোটা দেশটাই পাল্টে দেবে ।
এখন কচি কাচারা
ঝাণ্ডা হাতে মিছিলে হাঁটে
মাষ্টারের পিছু পিছু, -
পায় হাতে কলমে তালিম ।
দাদারা ঠোকে তাল
সবাইকে সোজা করবে বলে ।
এখন ফুলের ঘায়ে মূর্চ্ছা যাওয়া বাচ্চাদের
সমঝে চলেন শিক্ষকরা ।
একটু বেচাল হলেই অধ্যক্ষা পান
দাদাদের হাতে উচিত শিক্ষা;
নয়তো সোজা টেনে এনে
পোরে গারদে ।
এই মহৌষধ সবার ক্ষেত্রেই সমান,
নাই কোনো লিঙ্গ বৈষম্য ।

সে কালে তো বাবা মায়েরা
তোমাদের খোঁজও রাখতো না ।
এখন কিন্তু তারা সদা জাগ্রত ।
দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক গড়তে
তারাও লাগিয়েছে হাত ;
তাদের ছেলেমেয়েরা দেখে শিখুক সব !
স্কুল কলেজের আসবাবপত্র
লণ্ডভণ্ড করে ছুঁড়ে ফ্যালে
নতুন হবে বলে !

চিকিৎসা কি ভাবে করা উচিত,
ডাক্তার কি কি ভুল করেছে,
এখন তাদের নখদর্পণে ।
কেউ মরলেই
ডাক্তারের গালে পড়ে সপাটে চড় ;
নয়তো মেঝেতে ফেলে লাথি ।
এ সবই হ’ল তাদের জন্মগত অধিকার,
সংবিধানের বহু ঊর্ধ্বে;
তাই, শাসন ব্যবস্থা পায় না নাগাল ।

এখন আর নাই
মা কালীর খাঁড়া নিয়ে,
রাতের অন্ধকারে
রঘু ডাকাতের ডাকাতির গল্প শোনা ।
আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ,
ট্রেনে,বাসে,হাটে,বাজারে,রাজপথে
ঘুরে বেড়ানোর অধিকার
এখন সর্বজন স্বীকৃত ।
দূরদর্শনের পর্দায়
এখন ছেলেমেয়েরা দেখে
দেশ বিদেশের সুদৃশ্য কুদৃশ্য,
এবং আরো অনেক কিছু,
যা দেখতে পাওয়া ছিল
তোমাদের কল্পনার অতীত ।
মাউসের বোতাম টিপলেই
আলাদিনের দৈত্য
পৌঁছে দেবে তোমার কাছে
যা চাও তাই ।
চলেছে নবীন সভ্যতার জয়যাত্রা ;
ওই শোনো তার জয়ধ্বনি !

কি ভাবছো, ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কেল’ ? (Rip Van Winkle)
সেই বস্তাপচা স্বপ্ন ?
সে তো আর মিলবে না দাদু ;
চাও তো মাস্কেট দিতে পারি একটা,
আছে আমার ঝোলাতে ।