আমি নই কবি ।
কল্পনা বাস্তবে গড়া প্রকৃতির নিত্য নব ছবি
রাখেনি আকীর্ণ করি আমার দৃষ্টিরে,
দুর্বোধ্য সৃষ্টিরে
না যদি বুঝিতে পারি নাহি তাহে খেদ,
টানিয়াছি পূর্ণচ্ছেদ
ভাবের তুলিতে আঁকা সুন্দরের বুকে,
সকলই গিয়েছে চুকে
কিছু নাই বাকি,
আমি তো সবার সাথে আপনারে দিই নাই ফাঁকি ।
শুচিশুভ্র নির্মল ঊষায়
সদ্যোত্থিত বনভূমি নবস্ফুট কুসুম ভূষায়
তোমায় জানায় অভ্যর্থনা,
আমার কুটির হতে আঁধারের বুক চিরে কলের আহ্বান যায় শোনা ।
হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠে, দলে দলে ধায় মুটে কুলি,
তুমি দেখে কাব্য লেখ, আমি চেয়ে দেখি শুধু ধূলি,
অভাবপীড়নক্লিষ্ট কৃষক বধূর
অভুক্ত উলঙ্গ ছেলে; সে যে কতদূর
দুর্বিসহ, তুমি তার পাওনি সন্ধান,
সুদূর প্রাসাদ হতে তুমি শোনো রাখালের বাঁশী আর বিহঙ্গের গান ।
তুমি তো ধানের ক্ষেতে গোনো শুধু ঢেউ,
তাকায়েছ কেউ
কৃষকের কুটিরের পানে ?
আসে নাই কানে
ঋণের হিসেবখানা ?
সন্ধান না যদি রাখ থাক তা অজানা ।
পূজা যত কাছে আসে তত বাড়ে দুঃস্বপ্নের বোঝা,
কানে আসে সোজা
অব্যক্ত ব্যথার ধ্বনি, অস্ফুট ক্রন্দন;
আমার কি শোভা পায় শারদ বন্দন!
সূর্য অস্ত যায় ধীরে,
তরুণ তরুণী বসে শান্ত নদী তীরে
কি যে কথা কয় কানে কানে,
তারা জানে ।
তুমি বল শুভ্র প্রেম মিলন মধুর;
প্রেমের পাই নি দেখা, সে সুর
বাজে নি মোর কানে,
ঝংকার তোলে নি শুষ্ক প্রাণে ।
প্রেমের দুর্বোধ্য অর্থ জানা থাক তব,
আমি নাহি হব কুতূহলী ।
চঞ্চল চরণে যায় চলি
কলহাস্য গ্রামবধূগণ,
সাঁঝের শীতল জলে আকণ্ঠ করিয়া নিমগন
শোনায় প্রাণের কথা প্রিয় সখীটিরে ;
হাসিটুকু দেখে শুধু তুমি গেছ ফিরে ।
তুমি দেখ রাজহংসদল,
স্ফটিক-নিন্দিত নীরে আনন্দ উচ্ছ্বল,
প্রস্ফুট পদ্মের সাথে পাতায় মিতালি ।
আমি দেখি খালি
কচুরিপানায় ভরা পচা খানা ডোবা
না বাড়ায়ে প্রকৃতির শোভা,
বিকট দুর্গন্ধ ছাড়ে;
তারই এক ধারে,
রোগা শিবু বাউড়ির মেয়ে,
ঘোলা জলে ডুব দিয়ে দিয়ে উঠিয়াছে নেয়ে ।
কোকিলের গান আর মলয় পবন,
তোমারে করেছে অন্যমন;
আমার খাতায় আছে লেখা,
বিসূচীকা বসন্তের কটা রোগী হয়েছিল দেখা,
কত আছে বাকী,-
কে হোথায় কেঁদে ওঠে, আর কারো মৃত্যু হ’ল নাকি !
কান পেতে শোনো –
বুক ভাঙ্গা এ কান্নার ছন্দ নাই কোন ।
আপনার কাজে,
আত্মভোলা হয়ে আছি বাস্তবের মাঝে;
এই মোর ভালো,
অন্ধকারে থাকি যদি, জ্বালায়োনা কল্পনার আলো ।