স্বর বিন্যাস
শংকর ব্রহ্ম
আমরা যে কথা বলি, কবিতা আবৃত্তি করি, গান করি, এমন কি কাঁদি তা কিছু স্বর বা ধ্বনির বিন্যাস ছাড়া আর কিছুই নয়। এই স্বরের বিন্যাস কেমন, তা নিয়েই এই আলোচনা।
(প্লুতস্বর)
যে স্বরধ্বনিকে টেনে টেনে দীর্ঘ বা প্রলম্বিত করে উচ্চারণ করা হয়, তাকে প্লুতস্বর বলে। গানে, কান্নায় কিংবা দূর থেকে কাউকে ডাকলে প্লুতস্বরের সৃষ্টি হয়।
(মুক্তস্বর ও বদ্ধস্বর)
মাত্রা বা দল বা স্বর হচ্ছে তাই, যা আমরা পদ্যকে পাঠ বা আবৃত্তির সময় এককভাবে ও একদমেই সর্বনিম্ন স্বরভিত্তিক উচ্চারণ করে থাকি। ইংরেজিতে একে Syllable বলা যায়। যেমন সিলেবল শব্দটি উচ্চারণে আমরা কয়টি দম নিই? আমরা একে তিনদমেই পড়ি, সি+লে+বল। ফলে এতে স্পষ্ট হয় তিনটি মাত্রা। কিন্তু এখানে লক্ষ্যণীয় যে, সি আর লে হচ্ছে একটি একক বর্ণের স্বর বা মাত্রা যা উচ্চারণে মুখ দিয়ে অবারিত বাতাস বের হয়। এসব মাত্রাকেই বলা হয় মুক্তস্বর। আর বাকি বল শব্দটি দু'বর্ণের একটি যৌথস্বর যাকে ভেঙে উচ্চারণ করা যায় না, এককভাবেই উচ্চারিত হতে বাধ্য। কিন্তু একে উচ্চারণ করতে গেলেই অবারিত বাতাস বের হতে পারে না বরং জিহবা থামিয়ে দেয়। একেই বলি আমরা বদ্ধস্বর।
পদ্যের মাত্রা এই দু'স্বর দিয়েই গঠিত হয়।
এবার বোঝার জন্য দু'প্রকার স্বরবিন্যাস দেখা যেতে পারে। জসীম উদ্দীনের 'কবর' কবিতার একটি পঙক্তি দেখুন এবং মুক্ত ও বদ্ধস্বর খুঁজুন।
'এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে'। এখানে আছে ৮টি মুক্তস্বর এবং ৬টি বদ্ধস্বর। যারাই আমার এই মাত্রার পরিসংখ্যানের সাথে একমত হবেন, তারাই মাত্রা বুঝে গেছেন বলে নিশ্চিত বলা যায়। আর না বুঝলে বারবার পড়ুন। যখন দেখবেন বুঝতে পেরেছেন, তখন মজা পাবেন।