পোলিশ কবি চেসোয়াভ মিউশ - (ষষ্ট পর্ব)
শংকর ব্রহ্ম


                    নোবেল পাওয়ার পর চেসোয়াভ মিউশের অনেক কবিতা ও গদ্যের বই প্রকাশিত হয়। স্মর্তব্য যে, কয়েকজন বন্ধুবান্ধব বাদ দিলে তিনিই তাঁর কবিতার প্রধান ইংরেজি-অনুবাদক। তাঁর গদ্য বইয়ের মধ্যে আছে : ভিশন্স ফ্রম সান ফ্রান্সিসকো বে, বিগেনিং উইথ মাই স্ট্রিটস, দ্য ল্যান্ড অব উলরো আর তাঁর চার্লস এলিয়ট নর্টন ভাষণ দ্য উইটনেস অব পোয়েট্রি। ১৯৮৮ সালে মিউশের কবিতা সংগ্রহ প্রকাশিত হয়, যাতে তাঁর আনঅ্যাটেনেবল আর্থ কাব্যগ্রন্থটিও অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীকালে প্রভিন্সেস কাব্যগ্রন্থটিও এতে স্থান পায়। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় বিগেনিং উইথ মাই স্ট্রিট্স : এসেইস অ্যান্ড রিকালেকশনস। ১৯৯৪ সালে বের হয় আ ইয়ার অব দ্য হান্টার আর কাব্যগ্রন্থ ফেসিং দ্য রিভার প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৯ সালে ৮৮ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় কাব্য রোডসাইড ডগ যাতে তাঁর ধ্যান এবং অন্তর্বীক্ষণ স্পষ্টতই প্রতিফলিত। ২০০১ সালে প্রকাশ পায় তাঁর জীবনদৃষ্টি ও অভিজ্ঞতাঋদ্ধ গ্রন্থ মিউশেস আ বি সি। একই বছর আরো প্রকাশিত হয় তাঁর অনুবাদকর্ম আ ট্রিটিস অন পোয়েট্রি যা তাঁর নিজ ভাষায় প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৫৭ সালে। ২০০১ সালে আরো প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ সংকলন টু বিগেইন হোয়ার আই অ্যাম : নির্বাচিত প্রবন্ধ। বার্কলিতেই তিনি বেশিরভাগ সময় বসবাস করতেন, আর গ্রীষ্মাবকাশ কাটাতেন ক্রাকাওতে।

           কবিতা সম্পর্কে তিনি তাঁর বিখ্যাত একটি কবিতায় বলেছেন : The purpose of poetry is to remind us/ how difficult it is to remain just one person,/ for our house is open, there are no keys in the doors,/ and invisible guests come in and out at wil (কবিতার উদ্দেশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া শুধু একজন মানুষ থাকা কতটা কঠিন,
কারণ আমাদের ঘর খোলা, দরজায় কোন চাবি নেই,
এবং অদৃশ্য অতিথিরা ইচ্ছামত আসে এবং বাইরে আসে)
কীভাবে তাঁর ভেতর লেখার প্রেরণা বা উদ্ভিন্নতা জন্মলাভ করেছিল সে-সম্পর্কে তিনি বলেছেন, স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। কিন্তু তিনি এও বলেছেন, তা মোটেই ছিল না নিজেকে প্রকাশ করার নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস। বরং তিনি ষোড়শ শতকের ফরাসি প্লেইয়াদ গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন তখন। তিনি বলেছেন, ‘এটা বলা মোটেই যথার্থ হবে না যে, আমি কবি হতে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম আমার চারপাশের সাথে দ্বন্দ্বে মেতে উঠতে, চেয়েছিলাম একধরনের ঋণাত্মক মনোভাব গড়ে তুলতে, ফ্লবের যাকে বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে ঘৃণা হিসেবে উত্থাপন করেছিল। আমি চেয়েছিলাম এক ধরনের ভিন্ন স্টাইল রপ্ত করতে, জীবনের ভিন্নপথে চলতে।’ এ-কারণেই আমরা দেখি, তাঁর কবিতায় জীবন ও জগতের অন্বয়বদ্ধ সিমবিয়োসিস বা অন্যোন্যজীবিতা, যা ব্যাপক আয়তন এবং ভিন্নতর বাচন নিয়ে আবির্ভূত হয়। তাঁর কবিতাতে উপস্থিতি অনুপস্থিতির সঙ্গে অংশগ্রহণের কর্তৃত্ব করে, যা কবিতাকে খেয়ালের মতো শিথিল অথচ কূলপ্লাবী করে দেয়। বহুস্বরিক তাঁর কবিতা, বলার জন্য তা সবসময় উন্মুখ এবং তা বলেও যায় অবলীলাক্রমে। তাঁর কবিতা সম্পর্কে বলা হয় : তিনি পাঠককে এমন এক জায়গায় ঠেলে দেন যেখানে একজন, সময়সম্পর্কিত কবির নিজস্ব অন্বয়ের সূত্রে, দ্যাখে, সত্তার মাঝ দিয়ে উঠে আসা সত্তাকে। একটি কবিতায় তিনি বলেছেন এই বলার অভীপ্সা আর আকাঙ্ক্ষার কথা :

তুমি তো জানো কীভাবে আমি
শব্দ দিয়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করি
কী যে অনিবার্য
আর কীভাবেই না আমি ব্যর্থ হই।