মির্জা গালিব (প্রথম পর্ব)

('নিয়তির হরফে লেখা এক নাটকীয় অশান্তির নাম 'মির্জা গালিব')
শংকর ব্রহ্ম


               খুব সম্ভবত ভারতের ইতিহাসে মির্জা গালিবের মতো প্রভাবশালী কবি দ্বিতীয়টি আর নেই। তিনি প্রথম এগারো বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। বিয়ে করেন প্রথম তেরো বছর বয়সে।
               তার লেখা অজস্র গজল, শায়েরি, রুবাইয়াতে বিহ্বল হয়েছে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ থেকে পরিণত পণ্ডিত পর্যন্ত।    
                 এই উপমহাদেশে সঙ্গীতের পুরোধা জগজিৎ সিং, মেহদি হাসান, মোহাম্মদ রফি, গুলাম আলী, গুলজার কিংবা রাহাত ফতেহ আলী খানও ব্যবহার করেছেন তার অজস্র পঙক্তি। বিভিন্ন আসরে গেয়েছেন সমৃদ্ধ সব গজল।
               তার চেয়ে বড় কথা, তিনি একটি যুগ সন্ধিক্ষণের সচেতন সাক্ষী। মোঘল সাম্রাজ্যের পতন, ও কোম্পানির শাসনের প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামকে দেখেছেন খুব কাছে থেকে। নাটকীয় সময়ের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা গালিবের জীবন যেন তার লেখা কবিতার চেয়েও নাটকীয়।

          মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান - জন্ম ২৭শে ডিসেম্বর ১৭৯৭ সালে ((আগ্রা , উত্তরপ্রদেশ , ভারত) - মারা যান  ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৮৬৯ সালে, (চাঁদনী চৌক , দিল্লিতে , ব্রিটিশ ভারত), ৭১ বছর বয়সে। তাঁর ছদ্মনাম - গালিব
(মানে সর্বোত্তম) । তাঁর প্রদত্ত নাম আসাদুল্লাহ খান থেকে আসাদ।
সময়টা - মোগল যুগ , ব্রিটিশ রাজ।
তাঁর পিতা-মাতা
মির্জা আবদুল্লাহ বৈগ খান (পিতা)
ইজ্জত-উন-নিসা বেগম (মা)
তিনি উর্দু এবং ফারসি উভয় ভাষায় লিখেছিলেন । গালিব আজ কেবল ভারত উপমহাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
      মির্জা আব্দুল্লাহ বেগ (গালিব এর পিতা) বিয়ে করেন ইজ্জত-উন-নিসা বেগমকে(কাশ্মীরি),এবং তিনি শ্বশুর বাড়ি বাস করতেন। ১৮০৩ সালে আলওয়ারে এক যুদ্ধে তিনি মারা যান এবং রাজগড়ে ( রাজস্থান) তাকে দাফন করা হয়।  তখন, গালিবের বয়স পাঁচ বছরের বেশি ছিল। তারপরে তাকে তার চাচা মির্জা নসরুল্লাহ বৈগ খান নিয়ে আসেন নিজের কাছে। নাসরুল্লাহ একটি হাতির থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে মারা যান।
          তের বছর বয়সে গালিব নবাব ইলাহী বখশের (ফিরোজপুর ঝিরকার নবাবের ভাই) কন্যা উমরাও বেগমকে বিয়ে করেন। এবং তিনি তার ছোট ভাই মির্জা ইউসুফ কে নিয়ে দিল্লিতে চলে আসেন, সেখানে সে সিজোফ্রেনিয়া রোগে মারা যান । বিয়ের পর তিনি দিল্লিতে স্থায়ী হন। তাঁর একটি চিঠিতে তিনি তাঁর বিবাহকে প্রাথমিক কারাবাস  হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন ।স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক তিক্ত ছিল।
    'জীবন একটি ধারাবাহিক বেদনাদায়ক সংগ্রাম যা এই জীবনটি নিজেই শেষ হলেই শেষ হতে পারে' - এই ধারণাটি তাঁর কবিতায় একটি বিষয় হয়েছে বারবার।
বিশ্বকে  মির্জা গালিব মনে করেছেন একটি খেলার মাঠের মতো।
তিনি লিখেছেন,

'পৃথিবী আমার কাছে একটি শিশুর খেলার মাঠ। '