মির্জা গালিব (পর্ব - চার)
শংকর ব্রহ্ম


কলকাতায় গালিব


     নাসরুল্লাহ খানের মৃত্যুর পর সরকার থেকে দশ হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করা হলেও পরে তা সংশোধন করা হয়। নতুন সংশোধনে পাঁচ হাজার টাকা গালিবের পরিবার এবং পাঁচ হাজার টাকা খাজা হাজী নামে এক ব্যক্তির জন্য বরাদ্দ হয়। দ্বিতীয় সংশোধনের বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়নি। তাই প্রাপ্য দশ হাজার টাকার জন্য আহমদ বক্সের মারফত অনুরোধ জানান গালিব। দিনের পর দিন পার
হয়ে গেলেও কোন কাজ হলো না। এবার গালিব নিজেই চলে এলেন কলকাতায়। ইংরেজ সরকারের প্রতিনিধির সাথে দেখা করার জন্য। ১৮২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কানপুর, লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ, মুর্শিদাবাদ হয়ে পৌঁছালেন কলকাতা। এপ্রিলে গভর্নর জেনারেলের কাছে আবেদন পেশ করলেন। পক্ষে মজবুত যুক্তি থাকলেও হেরে যেতে হলো। বঞ্চিত হলেন পারিবারিক পেনশনের টাকা উদ্ধারে।

       ফোর্ট উইলিয়ামের উর্দু সংস্কার গালিবকে স্বতন্ত্র পথে, সাহস বাড়িয়ে দেয়।
       ১৮২৯ সালে কলকাতা ত্যাগ করেন গালিব। তার আগে কবি-সমাজের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গালিব মোটা দাগে নিজের মন্তব্য জানালেন, 'মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় সুপণ্ডিত হওয়া গেলেও প্রয়োগের ভালোমন্দ বিচার গড়ে উঠে না।'
        গালিব নিজে বেশ কিছু লেখা ফার্সিতে লিখলেও উর্দু্র প্রতি তার দরদ ছিল অনন্য।

“না সাতায়িশ কি তামান্না, না ছিলে কি পারওয়া,
গার নেহি হ্যায় মিরে আশার ম্যায় মানি না সাহি।”
(প্রশংসা পাবার বাসনা নেই; কোনো বিনিময়েরও প্রত্যাশা করি না। এমন যেন না হয় যে, আমার লেখার কোনো অর্থ নেই।)

       কলকাতার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থা গালিবের সাহিত্য চিন্তার গতি পরিবর্তন করে দেয়। ফার্সি শাসিত উর্দু তখন অনেকটাই অপরিণত ও বাগাড়ম্বরপূর্ণ। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ মারফত বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস সবার জানা। এই কলেজই প্রবর্তন করে উর্দু ভাষার নতুন শৈলী; যা আগের অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত। গালিব এ থেকে নিজস্ব ভাষা শৈলীকে মজবুত করার প্রেরণা লাভ করেন।