কবিতার বিভিন্ন আঙ্গিক - দুই
লান্দে কবিতা কাকে বলে?
আফগানীস্থানের ঐতিহ্যবাহী পশতুন ভাষায় লেখা লোক-কাব্যের অনন্য এক কবিতার ঘরানার নাম ‘লান্দে’।
সাধারণত এই কাব্যের বিষয়বস্তু নারী ও পুরুষের শাশ্বত প্রেম।
'লান্দে' হচ্ছে প্রেম-বিষয়ক দুই লাইনে লেখা বিশেষ ঘরানার অণুকাব্য -
অনেকটা তিন লাইনের জাপানি হাইকুর মতো।
তবে এই লান্দে লেখার কোন বাঁধা-ধরা ছক বা নিয়ম কানুন নেই হাইকু বা রুবাই-য়ের মতো।
শেষে অন্তমিল থাকলেই হলো।
একটি উদাহরণ -
'প্রিয়তম বিহনে সারা রাত পুড়ি আর জ্বলি
আমি এক মোমের বাতি, নীরবেই পুড়ি আর গলি’
- নাদিয়া আঞ্জুমান (১৯৮০-২০০৫).
আরও পাঁচটি লান্দে কবিতা বাংলায় -
১).
তোমার আবেশে কেটে যায় দিন সন্ধ্যাও আসে ফিরে,
চেতনারা সব তোমার আবেশে আমাকেই রাখে ঘিরে।
২).
'ভালবাসার কাজ সুবাস ছড়ানো,আকড়ে থাকা নয়,
তাই তো ভালবাসা করতে গিয়ে, অনেকে পায় ভয়।'
৩).
'আমি ভালবাসা পাব ভেবে ভালবাসিনে,
অপমানিত হবো জেনেও ভালবাসি হে।'
৪).
'ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নাই এই ভবে,
পুড়ে ছাই হতে চাও ভালবেসে ফেলো তবে।'
৫).
'মন নিয়ে খেলা করি মন নিয়ে বাঁচি,
এই মন আছে বলে তুমি আমি আছি।'
'চম্পু'কাব্য
---------------
'চম্পু'কাব্য কাকে বলে?
যে সব কাব্যে গদ্য ও পদ্যের আনুপাতিক হার প্রায় সমান সমান তাকে বলা হয় 'চম্পু'কাব্য।
কবি কোন কোন সময় তার মনের সম্পূর্ণ 'কাব্যিক ভাব' পদ্যে প্রকাশ করতে অপারগ হয়ে পড়েন,
বাধ্য হয়ে সে নেয় গদ্যের আশ্রয়। তখন সে লিখতে বাধ্য হয় 'চম্পু'কাব্য।
'সিংহাদিত্য' রচিত সংস্কৃত কাব্য 'আর্যাবর্তবর্ণন' (মহাভারত থেকে নেওয়া), এর উদাহরণ হলেও, বাংলা কাব্যে (গদ্য-পদ্য মিশ্রিত) 'চম্পু'কাব্য-এর উদাহরণ নেই বললেই চলে। যা আছে তা নিছক গদ্যে কিংবা পদ্যে রচিত,গদ্য-পদ্য মিশ্রিত আঙ্গিকে নয়।
চম্পুকাব্যের একটা নিদর্শন -
মনোব্যথা
শংকর ব্রহ্ম
------------------------------
মাঝে মাঝে শূন্যতা এসে গ্রাস করে নিতে চায় সব
একা লাগে বড়,বুকের ভিতর ওঠে খাঁখাঁ করে
আমি সে শূন্যতা ভরাতে চাই
না পাওয়া যত ভালবাসা,মনে জড়ো করে।
আর তার নির্যাস ঢেলে দিতে চাই কবিতায়
সবটা পারি না পারি না দেখে
বুকের ভিতরে শুধু ছটফট করে,মন করে ওঠে হায় হায়
একা একা কষ্ট পাই মনের ভিতরে।
তবু জনে জনে ডেকে বলতে পারি না সে কষ্টের কথা,
তা জমে জমে পাথর হয়ে ওঠে মনের ভিতরে গাঢ় ব্যথা।
বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতে তবু বন্ধু আছে কত,
ক'জনের কাছে আর মন খুলে বসি অবিরত?