ইরানের সাহসী কবি
শংকর ব্রহ্ম


                 বিংশ শতাব্দীর আধুনিক ধারার নারী কবিদের মধ্যে ইরানের কবি ফোরুগ ফারখজাদ অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং একজন সাহসী কবি,সেকথা সকলেই স্বীকার করেন।
                ফারখজাদের জন্ম হয় ১৯৩৫ সালে তেহরানে।  তাঁর বাবা মোহাম্মদ বাঘের ফারখজাদ ছিলেন পেশায় সেনা বাহিনীর কর্নেল। তার মা তুরান ভাজিরি-তেবার ছিলেন গৃহিনী।
          এই দম্পতির সাতটি সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান হলেন ফোরগ। স্কুলে সে নবম শ্রেণী অব্দি পড়াশোনা করে ছেড়ে দেয় পড়াশুনা। ছবি আঁকা ও সেলাইয়ের কাজ শিখতে শুরু করে। তারপর ষোল বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায় বিখ্যাত 'রম্যরস- রচনা' রচয়িতা পারভিজ শাপুরের সাথে।
         এক বছর পর কবি ফারখজাদের একটি পুত্র সন্তান হয়,তার নাম রাখা হয় 'কায়মার'।  
যাকে নিয়ে কবি রচনা করেন তার ‘আ পোয়েম ফর ইউ’ শিরোনামে একটি কবিতাটি।
        বছর দু’য়েক পর,১৯৫৪ সালে এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। তবে তা কি কারণে, জানা যায়নি। কবি শিশুপুত্র সন্তান 'কায়মার'কে, স্বামীর তত্ত্বাবধানে রেখে দিয়ে তেহরান ফিরে যান। সেখানে গিয়ে কবিতা চর্চায় সম্পূর্ণ ভাবে আত্মনিয়োগ করেন।
        ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘দ্য ক্যাপটিভ’।
       তাঁর কবির কবিতায় নারীবাদী প্রভাব বলিষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাই তাঁর কবিতায় নারীবাদী প্রভাব থাকার ফলে,তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে নানাবিধ সামাজিক নিষেধাজ্ঞা ও নেতিবাচক সমালোচনার।
         ১৯৫৮ সালে কবি ইউরোপ ভ্রমণে যান, সেখানে নয় মাস অবস্থানের কালে তার সাথে পরিচয় হয় লেখক ও চিত্র নির্মাতা ইব্রাহিম গোলেস্থানের, যিনি কবি ফারখজাদকে তার সহজাত প্রবণতাকে,স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করেন।
         স্বদেশে ফিরে কবি প্রকাশ করেন ‘দ্য ওয়াল’ ও ‘দ্য রেবেলিওন’ নামে দু’টি কাব্যগ্রন্থ।
        এ সময় কবি,চলচ্চিত্র নির্মাণের কলা-কৌশলের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরবর্তী কালে তিনি তাব্রিজ অল সফর করতে যান। সেখানে গিয়ে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষদের দিন-যাপন দেখে তাঁর মন কেঁদে ওঠে। তা নিয়ে তিনি নির্মাণ করেন একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র।    
        ১৯৬২ সালে তার সেই নির্মিত ‘দ্য হাউস ইন ব্ল্যাক’ নামক এই চলচিত্রটি অর্জন করে একাধিক আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি সূচক সম্মান।
        এই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় 'হোসেইন মানসোরি' নামে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত এক দম্পতির পুত্র সন্তানের সাথে তার অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে। পরবর্তী কালে সেই বালক 'মানসোরি'-কে দত্তক হিসাবে নিয়ে, কবি তেহরান ফিরে আসেন এবং তাঁর মায়ের বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন।
           ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘অ্যানাদার বার্থ’ নামে তার একটি দীর্ঘ কবিতা যা আধুনিক ধারার কাব্য-শিল্পের সৌধে, যুক্ত করেছে একটি নতুন ভাবনার পালক।
         ১৯৬৭ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালনার সময়,দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে,হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে কবির মৃত্যু হয়।
          তাঁর অন্যতম একটি বিখ্যাত কবিতা ‘লেট আস বিলিভ ইন দ্য বিগিনিং অব দি কোল্ড সিজন’ প্রকাশিত হয় কবির মৃত্যুর পর।  
         প্রকরণের দিক থেকে এ কবিতাটিকে ফার্সি সাহিত্যের আধুনিক কাব্যকলায় অত্যান্ত উচ্চ মানের সৃজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
          ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর বছর দশেক ফারখজাদের কবিতার প্রকাশ ও প্রচারকে নিষেধাজ্ঞা জারী করে দিয়ে তাঁর প্রতিভা রুদ্ধ করে রাখা হয়।