একটি কবিতার জন্ম-বৃত্তান্ত
শংকর ব্রহ্ম
গড়িয়ায় কবি ও অকবি বন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে, পিকলুর চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা খেয়ে, রাত ন'টার সময় বাড়ি ফেরার পথে একদিন,সারা জামায় ফ্রিল দেওয়া সাদা ফ্রক পরা একটি সুন্দরী ফরসা মেয়েকে রাস্তায় দেখে,ঠিক পরীর মতো লাগছিল।লক্ষ্য করলাম, কেউ কেউ কামাতুর চোখে তাকে দেখছে, পরীরও নজরে পড়েছে সেটা।আর তা দেখতে দেখতেই একটা পংক্তি এসে মাথায় টোকা মারল।
" ভিনদেশী এক পরী এসে
আমায় শুধু প্রশ্ন করে
এইখানে কি মানুষ থাকে?"
প্রশ্ন করলেই আমি তাকে সঠিক উত্তর দেব, তার কোন মানে নেই,আর তাকে সঠিক উত্তর দিতে যাবই বা কেন,
কারণ সে ভিনদেশী,স্বদেশবাসী নয়।
এই কথাটা মনে হতেই,পরের পংক্তিটি এসে জুড়ে বসল,পূর্বের পংক্তিটির সাথে।
" ভিনদেশী এক পরী এসে
ঙঙঙ আমায় শুধু প্রশ্ন করে
এইখানে কি মানুষ থাকে?
আমি তাকে কথার পাকে
জড়িয়ে ফেলি,
মানুষ যে নেই, বলি না তাকে।"
কথাটা বলেই মনে হল,ভিনদেশী পরীকে তো ফাঁকি দিলাম, কিন্তু তাকে ফাঁকি দিলে কি হবে,নিজে তো মনে মনে জানি,সত্যটা কি!
তাই,পরের কথাগুলো এ'ভাবে চলে আসে
অনাযাসে,
" ভিনদেশী এক পরী এসে
আমায় শুধু প্রশ্ন করে
এইখানে কি মানুষ থাকে?
আমি তাকে কথার পাকে
জড়িয়ে ফেলি,
মানুষ যে নেই,বলি না তাকে।
মানুষ নামক জন্তু আছে
ধারে কাছে
স্বার্থ সুখে সমাজ জুড়ে
যারা কেবল একলা থাকে।"
কবিতাটা এখানেই শেষ করব ভেবে ছিলাম,কিন্তু মনে হল,কবিতাটা যেন পূর্ণতা লাভ করেনি,আরও কিছু দাবী আছে তার কবির কাছে,তার পূর্ণতা লাভের জন্য,ভাবতে গিয়ে পরের অংশটা এ'ভাবে এসে যায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে,
"বিদুষী এক নারী এসে
আমায় কেবল প্রশ্ন করে
এইখানে কি অমানুষ থাকে
আমি কিছুই বলি না তাকে।"
শেষ পর্যন্ত লেখাটা দাঁড়াল, এ'ভাবে -
" ভিনদেশী এক পরী এসে
আমায় শুধু প্রশ্ন করে
এইখানে কি মানুষ থাকে?
আমি তাকে কথার পাকে
জড়িয়ে ফেলি,
মানুষ যে নেই,বলি না তাকে।
মানুষ নামক জন্তু আছে
ধারে কাছে
স্বার্থ সুখে সমাজ জুড়ে
যারা কেবল একলা থাকে।
বিদুষী এক নারী এসে
আমায় কেবল প্রশ্ন করে,
এইখানে কি অমানুষ থাকে
আমি কিছুই বলি না তাকে।"
বাড়ি ফিরতে ফিরতে কবিতাটা
মনে মনেই তৈরী হয়ে যায়,মাথার ভিতর।
বাড়ি ফিরে এসে দেখি,ছাদে জ্যোৎস্না থৈ থৈ করছে।আজ কোজাগরী পূর্নিমা, লক্ষ্মীপূজা। কথাটা মনে পড়তেই কবিতার অভিমুখ বদলে গেল আচমকা ।আগের কবিতাটির রূপান্তর ঘটে গেল।
কবিতাটি আবার এ'ভাবে নতুন করে লেখা হল।
মর্তবাসী
শংকর ব্রহ্ম
---------------------
স্বর্গ থেকে লক্ষ্মী এসে
মর্তবাসী জেনে,আমায় প্রশ্ন করে,
এইখানে কি মানুষ থাকে?
আমি তাকে কথার পাকে
জড়িয়ে ফেলি,
মানুষ যে নেই,বলি না তাকে।
মানুষ নামক জন্তু আছে,ধারে কাছে
মান হুঁশ সব হারিয়ে যারা
কেবল নিজের স্বার্থ সুখে
সমাজ জুড়ে একলা থাকে।
পাতাল ফুঁড়ে অলক্ষ্মী এসে
আমায় কেবল প্রশ্ন করে
এইখানে কি অমানুষ থাকে?
আমি কিছুই বলি না তাকে।
☞ এখন, আপনারাই বিচার করে দেখুন,
কোন লেখাটা আপনাদের কাছে ভাল লাগছে?