একটি কবিতা
পাঠকের প্রশ্ন ও কবির উত্তর            
      

দর্শন                        
শংকর ব্রহ্ম


                            কোন দর্শনই শেষ পর্যন্ত
আমাদের কোথাও পৌঁছে দিতে পারে না
প্রত্যাশা জাগায় মাত্র
                 মেধার জড়তা কাটায়
                                 তার বেশী কিছু নয়।
তাই এত দর্শনের জন্ম হয়েছে
                       ভবিষ্যতে আরও কত হবে।

যা আমাদের তাড়না করে বেড়ায়
                                তা কোন দর্শন নয়।
জীবনের প্রয়োজন
তার প্রভাবেই আমরা  যে যা  হয়ে উঠেছি
               অন্য কিছু হওয়া সম্ভব নয় বলে।


পাঠক - অণির্বাণ চৌধরী
(অণির ডাইরী)

               বেশ। তবে দাদা এই যে ষড়্দর্শন ..। এই ষড়দর্শনের অন্তর্ভুক্ত দর্শনগুলো, যেমন ন্যায়-দর্শন, বৈশেষিক-দর্শন, সাংখ্য-দর্শন, যোগ-দর্শন, পূর্ব-মীমাংসা বা মীমাংসা-দর্শন এবং উত্তর-মীমাংসা বা বেদান্ত দর্শন ... এরা তো সবচাইতে প্রাচীন বৈদিক দর্শন। যার উপর দিয়ে বয়ে গেছে দশ হাজার বছরের সভ্যতার পর সভ্যতা। ইতিহাস কি তবে মিথ্যা? সিদ্ধার্থকে যে দর্শন তাড়িয়ে নিয়ে বুদ্ধদেবে রূপান্তকরণ করেছিল, তবে কি সেই দর্শন মিথ্যা। কারণ আপনি বলছেন ... “যা আমাদের তাড়না করে, তা কোনো দর্শন নয়। মার্ক্সিয় দর্শন কে তবে কোথায় রাখবেন আপনি?

কবির উত্তর
-----------------------------

Anirban Choudhury
খুব সঙ্গত বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন বন্ধু।
সব দর্শনের জন্মই হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই, (মানে মানুষের জীবনে তার কার্যকারিতা ফুরালে) একটা দর্শনের পর আর একটা দর্শনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, এবং নতুন দর্শনের জন্ম হয়েছে। সে কথাই বলা হয়েছে কবিতায়।
       ইতিহাস সত্য, সব দর্শনই সত্য, কিন্তু মানুষের জীবনে যখন তার কার্যকারীতা হারিয়েছে, তখনই প্রয়েজন হয় পড়েছে,নতুন কোন দর্শনের।
       যার উপর দিয়ে দশহাজার বছরের সভ্যতা বয়ে গেছে, আজ সেটা অকেজো হয়ে পড়েছে বলেই, নতুন দর্শনের প্রয়োজন হয়েছে। না হলে সে সেটা আজও বজায় থাকত।
         সিদ্ধার্থকে বুদ্ধদেব হতে যে দর্শন কাজ করেছিল, আজ তা এই সাধারণ মানুষের জীবনে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ আজ আর সৎ-চিন্তা করে না, মাধুকরী করে জীবন যাপন করতে পারে না।
         স্থান ও কাল মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। মাক্সীয় দর্শন, রাশিয়া চীনে এক সময় সার্থক হলেও, আজ রাশিয়া তার থেকে সরে এসেছে (মার্কসবাদ থেকে)। চীন তো বিশ্ব আগ্রাসী নয়া সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
কোন বাদই চিরস্থায়ী নয়। মানুষের প্রয়োজনেই তার আবির্ভাব ঘটেছে, আবার প্রয়োজন ফুরালে তার বিলুপ্তি ঘটেছে। নতুন নতুন বাদের (মানুষের প্রয়োজনেই) আবির্ভাব ঘটেছে।

জীবন দর্শন এই মানবতা ছাড়া
           আর কোন দর্শনের পক্ষে
        কোথাও পৌঁছে দিতে পারা
                     এতই সহজ কাজ?

        এ কথা বোঝেনি যারা আজ
তারাই গড়তে চায় অদ্ভুত সমাজ।

সে সমাজ গড়ে উঠে ভেঙে পড়ে
                            বাইরে ভিতরে।

                 কত বাদ এলো  গেলো
প্রতিবাদে যতই না ঝড় তোলো  
সব কিছু হয়ে যাবে ফাঁকি
যদি সেথা রয়ে যায় মানবতা বাকী।


অণির্বান
--------------
শংকর ব্রহ্ম

   আহা অপূর্ব। আপনার আলোচনায় এখন এটাই মনে হয়, মানুষের প্রয়োজন এখন অবিনশ্বরবাদ।

কবি
-----------------
Anirban Choudhury
মানুষ তার একান্ত প্রয়োজন ছাড়া
'দর্শন-বাদ' আকড়ে ধরে
কেন বাঁচতে চাইবে বল?
সে সব দর্শন পাঠ্য বিষয় হয়ে
শুধুমাত্র বইয়ে বেঁচে থাকবে।