ধ্রুপদী কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত - (প্রথম পর্ব)
শংকর ব্রহ্ম


                  বাংলা সাহিত্যের প্রাঙ্গণে যে ক'জন ধ্রুপদী লেখকের সন্ধান আমরা পেয়েছি, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। তাঁর লেখা কবিতা কলাকৈবল্যবাদে'র (Art for art sake) মন্ত্রণায় উজ্জীবিত। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি 'পরিচয়'-এর মতো পত্রিকার (বাম মনস্কতার পত্রিকা) সম্পাদনায় নিযুক্ত ছিলেন বহুদিন।
                তিনি খুব কবিতা বেশী লেখেন নি। অনুবাদ বাদে ত্রিশ বছরে মাত্র ১৩০টির মতাে কবিতা। ১৯২৪ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে প্রায় শতাধিক কবিতা, যা পরবর্তীকালে  তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।

১। তন্বী (এম. সি. সরকার এন্ড সন্স)
২। অর্কেষ্ট্রা (ভারতী ভবন)
৩। ক্রন্দসী (ভারতী ভবন)
৪। উত্তর ফাল্গনী।

               তাঁর ২৯ বছর বয়সে প্রথম কবিতার বই ‘তন্বী’ (এম. সি. সরকার এন্ড সন্স - থেকে ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্র প্রভাব সুস্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে। তিনি তা নির্দ্বিধায় স্বীকারও করেছেন ।
তিনি জানিয়েছেন,
" কবিতাগুলাের উপরে স্বদেশী বিদেশী অনেক কবিই ছায়াপাত করেছেন - সব সময়ে গ্রন্থকারের সম্মতিক্রমে নয়। কেবল রবীন্দ্রনাথের ঋণ সর্বত্রই জ্ঞানকৃত । "
                এই কাব্যগ্রন্থে তাঁর বিশেষ স্বকীয়তার পরিচয় তেমন পাওয়া যায় না। পঁচিশ বছর বয়স থেকে উনত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর নবিসী পর্ব' বা কাব্য সৃজনের প্রাথমিক স্তর বলা চলে। কবি জীবনানন্দ দাশ অবশ্য তাঁর উনত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে পাঠকদের উপহার দিয়েছেন ‘বােধ', ক্যাম্পে'-র মতাে স্মরণীয় কবিতা।
                এই বয়সের মধ্যে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, সময় সেন, অজিত দত্ত প্রমুখেরাও তাঁদের রচনায় স্বাতন্ত্রের পরিচয় দিয়েছেন, যার জন্য সমকালীন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু কবি  সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ক্ষেত্রে মোটেও তা ঘটেনি।
                   তবে তারপর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁর দ্রুত উত্তরণ ঘটে। 'তন্থী' প্রকাশিত হওয়ার পর মাত্র পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ - অর্কেষ্ট্রা (ভারতী ভবন - থেকে) প্রকাশিত হয়। এখানে তিনি স্বকীতার পরিচয় রেখেছেন স্পষ্ট ভাবেই।
                   এর পরবর্তী তাঁর তিনটি কাব্যগ্রন্থ 'অর্কেস্ট্রা', 'ক্রন্দসী', উত্তর ফাল্গনী’ (১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৩ সাল) এই পাঁচ বছরের মধ্যে রচিত কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
        সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যৌবনেই বেশী লিখেছিলেন। প্রায় শতাধিক কবিতা লিখেছেন, মাত্র ১২ বছরের মধ্যে (১৯২৪ থেকে ১৯৩৩-র মধ্যে)। তারপর পরবর্তী দীর্ঘ ১৮ বছরে (১৯৩৮ থেকে ১৯৫৪) মাত্র ২৬টি কবিতা, যা উত্তর কালের দুটি কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। 'সংবর্ত' ও 'দশমী'-তে।
                  সুধীন্দ্রনাথের স্বার্থকতা যাতে সর্বপেক্ষা সার্থক রূপে ধরা পড়েছে 'সংবর্ত' কাব্যগ্রন্থে। এগুলি পরিণত বয়সের রসসৃষ্টি তাঁর।