ধ্রুপদী কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত - (পঞ্চম পর্ব)
শংকর ব্রহ্ম
‘অর্কেস্ট্রা' ও 'উত্তর ফান্ধুনী' মূলতঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রেমের কবিতার বই । অনাদি যুগের যত চাওয়া যত পাওয়া। সুধীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতায় তেমন উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে না মোটেও।
"খেলাচ্ছলে শুধিয়েছিলাম, “তােমার প্রেম
নই কি আমি প্রথম আগন্তক ?”
অবাক বিষাদ এল তােমার চক্ষে নেমে
রক্তে ভাটা, ফিরিয়ে নিলে মুখ।"
অন্যত্র আবার দেখি -
"তােমারে যে কেন বাসি ভালাে,
সে-সত্য জানার আগে মিলনের মুহূর্ত ফুরাল
শুরু হলাে দীর্ঘায়িত বিচ্ছেদের রাতি।"
কিংবা
"তােমারই কেশের প্রতিচ্ছায়
গােধূলীর মেঘ সােনা হয়ে যায়,
পাকা দ্রাক্ষার অরাল লতায়
তােমারই তনুর মদিরা ভরা। "
ক্রন্দসী' কাব্যগ্রন্থে সুধীন্দ্রনাথ আরাে বিস্তারে ও গভীরতায় ডুবেছেন। আত্মসন্তুষ্টির অভাব, পুরনাে পৃথিবীর নিঃশেষিত মূল্যবােধ সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে এই কাব্যগ্রন্থের প্রায় সব কবিতায়। 'সৃষ্টি রহস্য', 'নরক', 'প্রার্থনা' প্রভৃতি কবিতাগুলাে- দুঃখবাদ ও হতাশায় আক্রান্ত।
"কিছুরই কি নেই অব্যাহতি ?
জীবনের মরুপ্রান্তে স্মরণ অখ্যতি বসতি,
তারেও করিবে ছারখার
রক্তলােভাতুর তব দিগ্বিজয়ী শকট দুর্বার
হে কাল হে মহাকাল।"
'উটপাখী'-র মতাে হাল্কা মেজাজের তির্যক কবিতা সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আর একটিও লেখেননি।
"কোথায় পালাবে? ছুটবে বা আর কত ?
উদাসীন বালি ঢাকবে না পদরেখা।
প্রাক-পুরানিক বাল্য বন্ধু যত
বিগত সবাই, তুমি অসহায় একা।
....................................................
ফাটা ডিমে আর তা দিয়ে কী ফল পাবে?
মনস্তাপেও লাগবে না ওতে জোড়া।
অখিল ক্ষুধায় শেষে কি নিজেকে খাবে?
কেবল শূন্যে চলবে না আগা গোড়া।'
ছন্দে-মেজাজে-আচরণে-অনুভবে, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যসৃষ্টির অন্যতম দৃষ্টান্ত -
"সেদিনও এমন ফসল বিলাসী হাওয়া
মেতেছিল তার চিকুরের পাকা ধানে
অনাদি যুগের যত চাওয়া যত পাওয়া
খুঁজেছিল তার আনত দিঠির মানে।
একটি কথার দ্বিধা থর থর চুড়ে
ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী
একটি নিমেষ দাঁড়াল সরণী জুড়ে
থামিল কালের চির চঞ্চল গতি,'
[শাশ্বতী]