বিস্মৃত এক কবির স্মৃতিচারণ - (প্রথম পর্ব)
শংকর ব্রহ্ম
'কবি অশোক বিজয় রাহা' - স্মরণে,
কবি ঊর্দ্ধেন্দু দাস একটি কবিতায় লিখেছিলেন।
ঈশানের পুঞ্জমেঘ
কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ
-------------------------------
“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূন্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,
স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,
তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য,
নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ
তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত শাসন!
সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়;
হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!”
আধুনিক কবিতার সূচনালগ্নে যে ক’জন বঙ্গীয় কবি কবিতার ভূবন দাপিয়ে বেরিয়েছেন স্বমহিমায় তাদের মধ্যে অশোক বিজয় রাহা অন্যতম। ব্যক্তি জীবনে তিনি পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিলেও কাব্যচর্চা ছিল তাঁর হৃদযের মর্মমূলে। কবি অশোক বিজয় রাহাকে নানাভাবেই চিত্রিত করা যায়। কারণ তাঁর মধ্যে একাধারে নানান গুণের সমন্বয় ঘটেছিল। ‘অধ্যাপকরূপে তিনি ছিলেন অসাধারণ আকর্ষণীয়। তাঁর বাগ্মীতা, পাণ্ডিত্য, বিশ্লেষণী ক্ষমতা ছিলো অপূর্ব। তাঁর আবৃত্তি ছিল অনুকরণীয়।’
অথচ কী এক অজ্ঞাত কারণে আজ তিনি আমাদের অনেকের কাছেই তেমন সমাদৃত নয়। আক্ষেপের বিষয় আরও হলো বর্তমান প্রজন্মের অনেকে তাঁর নাম পর্যন্ত জানেন না কবি হিসাবে।
অশোক বিজয় রাহা ১৯১০ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানার ঢাকাদক্ষিণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বঙ্কু বিহারী রাহা চা বাগানে কাজ করতেন। বঙ্কু বিহারীর চার ছেলের মধ্যে অশোক বিজয় ছিলেন সবার ছোট। অশোক বিজয় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। স্কুল জীবনে তিনি ছিলেন অন্যদের চাইতে অনেক আলাদা। মেধাবি ও বিনয়ী হওয়ার কারণে শিক্ষকরা তাঁকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন। সিলেট গভর্ণমেন্ট হাইস্কুল থেকে অশোক বিজয় প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। আইএ পরীক্ষাতেও তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। দর্শনশাস্ত্রে অনার্স এবং বাংলায় এমএ পাশ করে 'রসময় মেমোরিয়াল স্কুলে' শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তারপর করিমগঞ্জ কলেজেও বেশ কিছুদিন অধ্যাপনা করেন।
কবি অশোকবিজয় রাহা ছাত্রাবস্থা থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। সাহিত্যের প্রতি টানের ফলে কলেজে দর্শনের অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৭ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক হন।
নবগঠিত ভারতীয় গণনাট্য সংঘে তিনি হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সহকর্মী হয়েও কাজ করেছিলেন কিছুদিন।