যে মেয়েটা শশুরবাড়ি থেকে অনেক দূরে আছে ,
শুধু একটা চাকরি করবে বলে –
তাকে বোলতে যেও না ,
তুমি সংসার ফেলে চাকরি করতে এসেছো কেন?
তার সংসার সে ঠিক গুছিয় নেবে সময় হলে ,
যে মেয়েটা একলা থাকে দুটো বাচ্চাকে সাথে নিয়ে, কেবল একটা আয়ার উপর নির্ভর কোরে –
তাকে বলতে যেও না –
এভাবে চাকরি সামলালে বাচ্চারা মানুষ হবে তো ?
যে মেয়েটা সদ্য বিয়ে করে এক কামরার ছোট ঘর নিয়েছে,
এক নতুন জায়গায়, অচেনা পরিবেশে –
তাকে বলতে যেও না, বরতো এত বড় সরকারি চাকরি করে –
এই কটা টাকার জন্য তুমি বর কে ছেড়ে আসতে পারলে ?
আসলে সত্যি কথাটা হল ,
বরের সাথে সর্বক্ষণ না থেকেও
, শশুরবাড়িতে সর্বক্ষন না থেকেও , এমন কি বাড়ির ভেতর সারাক্ষন না থেকেও সুন্দর করে একটা সংসার করাই যায় ,
যদি সংসারের মানুষ গুলোকে পাশে পাওয়া যায় –
সকাল ৯ টা ৩০ , বাড়ি থেকে যে মেয়েটা চাকরিতে বেরোয় ,
সে ভোর পাঁচ টা তে ওঠে ,সব রান্না বান্না গুছিয়ে , বাচ্চাদের ঘুম থেকে তোলে ,
তারপর তাদের রেডি করে স্কুলে পাঠায় –
কিভাবে একলার প্রচেষ্টায় এ কাজ রোজ রোজ সম্পন্ন হয়,
তা সেই জানে,
কাজের দিদি আসে সাতটায় ,
ওদিকে ফোনে থাকে সর্ব ক্ষন বর , সে আবার গুজরাটে ,
সে কি পরবে কি খাবে, জলটা খেয়েছে কি না –পরিমাণ মত ,
ভিডিও কলে সব ঠিকমত দেখে নেওয়া ,
তার ডাল সেদ্ধতে হলুদ পড়ল কিনা, ওয়াশিং মেশিন থেকে জামা গুলো মেলা হল ,
বেরুবার আগে রুমালটা নিয়েছে তো মনে করে ,
দরজাটার চাবিটা ঠিক মত লেগেছে কিনা –ইত্যাদি ইত্যাদি-
তারপর নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়া ,
স্কুলে একদল বাচ্চারা বলে ওঠে গুড মর্নিং ম্যাম –
তখন সে স্কুলের দিদিমনি ,
বাচ্চারা ডেকে ওঠে সমোস্বরে অ , আ ,ক খ -
ও হ্যাঁ,স্কুলে যাওয়ার পথে মেট্রো তে চড়ে প্রথম ফোনটা শুশুড়িকে , তারপর নিজের বাড়ি
ওই একই কাজ ওষুধ খেল কিনা ,অনলাইনে জিনিসের গুলো এল ঠিকমত এল কিনা ,
সকালে হেঁটেছে কিনা ,সুগার কমেছে কিনা , কাজের মাসি বলা রান্না সব চিনি ছাড়া,তেল কম,কোন দিন কোন কোন পদ,
একেবারে ডায়েট অনুযায়ী
এরপর ডাক্তার কি বললো, আরো কত কি ইত্যাদি ইত্যাদি -
তারপর ঠিক শাশুড়ির জন্মদিনে সব্বাই বাড়ীতে –
সেকি আর বলার –
গরম ভীষণ এবার ,তাই বউমা লাগিয়ে দেয় ,একটা এসি শাশুড়ির রুমে যতই আপত্তি থাকুক ,
ছেলে এনেছে একটা বড় ফোন ,
রেগে আগুন শাশুড়ি মা,তোরা যত বাজে খরচা করিস ,কি দরকার ছিল এসব আমাদের
কস্টের রোজগারের টাকা রাখতে শেখ –
তবে সত্যি কদিন ঘুমটা ভাল হচ্ছে ঠাণ্ডা বাতাসে -
এই গরমের ছুটিতে কটা দিন
সে এক অদ্ভুত আনন্দ , এক অবিশ্বাস্য কর শান্তির স্বাধীন অনুভুতি –
বউমা শিখিয়ে দেয় ফেসবুক, ইনাস্টাগ্রাম –
শাশুড়ি পোস্ট দেয় ,
হাসিমুখে সব্বাই দাঁড়িয়ে আছে ,আছে এক সাথে ,
পুরীর সমুদ্র জুড়ে শুধু ঢেউ আর ঢেউ ,
ক্যাপশানে লেখা , জগন্নাথ দর্শন ,
এভাবেও সংসার বুনি আমরা কেউ কেউ -