মেয়েকে স্কুল বাস থেকে নেব বলে ,  
রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ালাম ,

অন্যদিন কাজের দিদি আসে , বা ওর বাবা ,আজ আমি এলাম,
বাসটা আস্তে দেরী দেখে রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসলাম,
দোকান টা এখন বন্ধ-
ফোনটা আনতে ভুলে গিয়েছি, কটা বাজল কে জানে,
স্কুলের বাসতা তো এখনো আসছে না-
একটা শাড়ি পরা বউ সাইকেল নিয়ে দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল,
সাইকেলের পেছনে একটা বছর পাঁচেকের ছোট্ট ছেলে স্কুল ড্রেস পরে বসে আছে –
তাকে সাইকেল থেকে নামিয়ে দিতেই সে আমার পাশে থাকা আরেকটা সরু তক্তার  বেঞ্চে এসে শুয়ে পড়ল –  
মেয়েটাও দোকানের দিকে এল ,
বুঝলাম চায়ের দোকানটা ওদের ,
দোকানটা কিছুক্ষন বন্ধ রেখে ও স্কুল থেকে ছেলেকে আনতে গিয়েছিল –
এরপর একটা ছোট্ট তালা চাবি দিয়ে দোকানের তালাটা খুলে সামনে থেকে ঝাপ্টাটা তুলে দিল –
দেখলাম কয়েকটা কাঁচের জারে সাজানো আছে বাবুজি কেক, বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট
ইতিমধ্যে একটা ছেলে এসে বলল  বউদি এক প্যাকেট সিগারেট নিলাম ,টাকাটা ধর – মেয়েটা হিসেব বুঝে  নিয়ে কটা খুচরো ফেরত দিয়ে চটজলদি –
এবার ছেলেটার মাথার কাছে এসে বসল -  
ছেলেটার মাথার চুলে বিলি কেতে দিতে দিতে বলল কিরে আজ স্কুলে কি রান্না হয়েছে –
ছেলেটা বলল বাঁধাকপি আর ডাল –
এবার ছেলেটাকে কোলে তুলে বেঞ্চে দাড় করিয়ে মোজা জুতো আর স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করাতে  করাতে  জিগাসা করল –
কি খাবি এখন –  
ছেলেটা বলল ডিম ,
সকালেই তো ডিম দিয়ে চাউমিন করে দিলাম , একদিনে এত ডিম খেতে নেই বাবা –
ছেলেটা বায়না করে  গলা জড়িয়ে ধরে  বলল ডিম-
মেয়েটা ঝটপট একটা কাঁসিতে একতু ভাত ,ডাল ডিম পোচ আর এক টুকরো পেপে সেদ্ধ নিয়ে এল-
আর ওদিকে গাসে কাস্টমারদের জন্য ডিমটোস্ট বসাল ,
ছেলেটা ভাতের দিকে হাত বাড়াতেই ,খপাস করে হাতটা ধরে নিয়ে হাতটা  ধোয়াতে ধোয়াতে মেয়েটা বলল কতবার বলেছি হাত না ধুয়ে খাবি না-
ছেলেটা যে বেঞ্চ টাতে শুয়ে ছিল , সেটাতে বসেই এখন নিজেহাতে ভাত মেখে খাচ্ছে-        
আর ওদিকে ওর মা দোকানের সামলাছে ,কখনো চা, কখনো ডিম টোস্ট ,তো আবার কখনো গামলা তে রাখা জলে বাসন ধুয়ে নিচ্ছে , এক মিনিটও বসার সময় নেই-
কলেজের সামনে বড় রাস্তার পাশে  ছোট ছোট দোকানগুলোতে এরকম ভিড় লেগেই থাকে, কিন্তু তার মধ্যে একটা বইয়ের ব্যাগ , এক সদ্য স্কুলে পড়া ছেলে ,  তার বড় হয়ে ওঠার গল্প -
ও এক আসাধারন রোজগেরে মাকে দেখে বার বার মুগ্ধ হচ্ছিলাম -  
কিন্তু মেয়ের স্কুল বাস এখনো এলোনা দেখে আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল, আবার ফোনটাও ছেড়ে এসেছি –
আমি  বার বার বেঞ্চ থেকে উঠে রাস্তাটা দেখছিলাম ,

এবার দোকানের একটি ছেলেকে জিজাসা করলাম ,কটা বাজে বলুনতো ?

মেয়েটা নিজের দিকে প্রশ্নটা টেনে নিয়ে বলল ,
“চিন্তা কোরোনা দিদি ,
আমি ছেলেকে স্কুল থেকে আনার কিছুক্ষন পর ওই স্কুল বাসটা আসে-
এবার এসে যাবে-

এই কলেজ গেটে একের পর এক যতগুলো স্কুলের বাস দাঁড়াবে,এই বেঞ্চে বসে আমার ছেলে সব্বাইকে হাত নেড়ে টাটা করবে –
এখন কিছুতেই আমার ছেলে বেঞ্চ ছেড়ে উঠবে না-“
এরমধ্যেই আমার মেয়ের স্কুল বাস্টা এসে গেল ,
সত্যি একঝাঁক বাচ্চা ছেলে মেয়েরা জানলা দিয়ে হাত নেড়ে  ওকে টাটা করছে আর হাসছে –
ও বেনেচে বসে পা দোলাচ্ছে আর হাত নেড়ে টা টা করছে আর খুব হাসছে-  
সেকি আনন্দ সবার , ওকে দেখে , সব্বাই ওকে চেনে- , যেন সবার প্রানের বন্ধু ও-
প্রতিদিনের এই দুপুর তিনটে কুড়ি্র এই আনন্দময় দৃশ্যটা আমার অজানাই থেকে যেত ,যদি আমি আজ না আসতাম-
মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে বাসটা চলে গেলে,  
হাটতে হাটতে দেখি,
আমার মেয়েও পিছন ফিরে ওকে দেখে হেসে হেসে টাটা করছে,
আর ছেলেটাও –
এই ভালবাসার সম্পর্কের সত্যি কি কোন নাম হয়,

এক চায়ের দোকান সামলে  এক মায়ের ছেলেকে মানুষ করার গল্পে ,  
কেউ পাশে থাক বা না থাক ,
আছে প্রতি দুপুরের স্কুল ফেরতা একঝাঁক হাসি মুখ -