স্ত্রী হওয়ার অপরাধে শাস্তি পেতে পেতে
যে মেয়েটা মরে গেল-
তার মৃত মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে বার বার প্রতিদিন।
সে আমার খুব চেনা , সে আমার খুব আপন ,
হয়তো বা কখনো আমি নিজেই –
তবুও কখনো কখনো হাজার লক্ষ্য কোটি
নারীর যন্ত্রণার বেদনার ইতিহাস থেকে জাগছি
আমি এক নতুন ইতিহাস লিখবো বলে-
আমি নারী –
ভালবেসে নতজানু আমি তোমার পদতলে –
আমার ভালবাসার মুল্যে ,
তোমার ব্যর্থতা এঁকে দিল আমার শরীর জুড়ে কালশিটে দাগ –
তুমি শিল্পী , পুরস্কারের যোগ্য তোমার প্রতিভা –
আর আমি প্রতিদিন তুচ্ছতা মেখে ধীরে ভুলে যাই আমি কে –
এভাবে প্রতিদিন ধীরে ধীরে
মরে আমার ভালবাসা ,মরে আমার প্রেম ,মরে আমার মন ,একে একে সব কিছু-
মরে যেতে পারতাম অতি সহজেই –
তবুও আমার শক্ত হাতে হাত ধরা দুটি শিশু মুখ
আজ উজ্জ্বল নক্ষত্র – ঘর ছেড়ে ছিলাম সেদিন শুধু বাঁচব বলে।
আজ আমার ঠোঁটের কমলা লিপস্টিক ,
কমলা রঙা শাড়ীর সাথে ম্যাচ করা-
আমার চোখের কাজল –
সবাই জানে আমি ভালো আছি ভীষণ,
আমার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি নিজেকে ভালোবেসে -
সমাজ বলছে ফিসফিস ,
আমি ভুলে গেছি শিল্পী স্বামী তোমায় -
দশ ফুট বাই দশ ঘরে অন্ধকারে অনাদরে অসুস্থ পড়ে তুমি –
অভাব জীবন , ধুলা মাখা পুরোন যতো পুরস্কার ।
জীবন সায়াহ্নে এসে তুমি শুধু শিল্পি হতে চাইলে আজও ,
প্রমান করতে চাইছ তুমি ফুরিয়ে যাওনি এখনোও-
মানুষ হতে চাইলে কোথায় ?
কে বলে ভুলে গেছি তোমায় ,
ভুলতে পারছি না কিছুতেই – তাই তো দূরত্ব এত।
গায়ের কালশিটে দাগ গুলো আজ আর নেই,
শুধু রয়ে গেছে বুক ভরা ক্ষত-বিক্ষত বেদনার ইতিহাস –
দেখ, ভালো করে দেখ সমাজ,
বেদনার ইতিহাস ভেদ করে জ্বলছে এক নক্ষত্র নারী ।
আজ কবি বেদনার ইতিহাস নয় -
আজ লেখো এক নক্ষত্রে কতো থাকে আলো ।
(কিছু কথা - আনন্দ বাজার পত্রিকাতে শতরূপা স্যানালের একটি লেখা পড়ে এই কবিতাটি লিখেছি ।–শতরূপা স্যানল উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর স্ত্রী। যিনি পারিবারিক হিংসার কারনে বিবাহিত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে নিজের দুই মেয়ে চিত্রাঙ্গদা ও ঋতাভরি কে মানুষ করেছেন। এই কবিতাটির মাধ্যমে শতরূপাদিকে আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধ্যা ও শুভকামনা জানাই । )