প্রাইমারী স্কুলের ক্লাস টুয়ের প্রশ্নপত্রে ছিল-
পরিবারের সদস্যদের কাজ কি?
তায় ছোট্ট একটি মেয়ে লিখেছে,
মা কলেজে যায়,
দাদু গাছ লাগায়,
আর বাবা রান্না করে ইত্যাদি ইত্যাদি-
শিক্ষক মহাশয় যখন খাতাটি চেক করলেন ,
তখন একটু অবাক হলেন -
মেয়েটা সব প্রশ্নের উত্তর ঠিক লিখলো,আর এরকম একটা সাধারন ভুল করল-
ক্লাসে খাতা দেখানোর সময়,
মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে একটু বিরক্তির সুরে বললেন,
এটা কি লিখেছ খুকি?
বাবা রান্না করে ?
মা কলেজে যায়-
অন্য সমস্ত বাচ্চারা খিলখিল করে হেসে উঠল,
মেয়েটা সিট ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
আমি তো ঠিকই লিখেছি, বাবা রান্না করে -
মা কলেজে যায়-
আবার গোটা ক্লাসের বাচ্চারা খিল খিল করে হেসে উঠল,
শিক্ষক মহাশয় এবার ধমক দিয়ে বললেন,
এতবার ধরে পড়ালাম,বইতেও লেখা আছে
তাও ভুল করছ,
বইটা ভালো করে পড়বে,
এবার থেকে এরকম ছোটখাটো ভুল যেন আর না হয়,
এরপর শিক্ষক মহাশয় ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন-
ক্লাসের ছোট ছোট বাচ্চারা সব্বাই মিলে ওকে ঘিরে ধরেছে,
আর হাসাহাসি করে বলছে
আরে বাড়িতে তো সবার মা রান্না করে,
বাবা কাজে যায়
তুই এটাও জানিস না-
ক্লাসের চল্লিশটা বাচ্চা একদিকে,
আর মেয়েটা আর একদিকে
ও বোঝাতেই পারচ্ছে না, যে বাড়িতে বাবা রান্না করে-
আর এদিকে ক্লাসের চল্লিশটা বাচ্চাও ওকে বোঝাতে পারছে না
যে -
বাবাদের কাজ কখনে রান্না করা হতে পারে না,
ওটা মায়েদের কাজ-
বাড়ি ফিরে ছোট্ট মেয়েটা তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
শিক্ষক মহাশয় উত্তরটা কেটে দিয়েছেন,
কোন নম্বরও দেননি,
আমি তো ঠিকই লিখেছি মা,বাবা তো রান্না করে, তুমি কলেজে যাও-
কেন ক্রস দিল তবে?
আসলে ছোট্ট মেয়েটির সম্মান বোধ জন্মেছে-
ও বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে-
ও বুঝতে শিখছে, কিসে সম্মান আর কিসে অপমান,
তাই বাবার অসম্মান, আর নিজের প্রশ্ন পত্রে ভুল উত্তর দেওয়াটা ওর কাছে বেশ অসম্মানের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে-
তাই সেই সম্মান টুকু আদায় আদায় করার জন্য বার বার প্রশ্ন করছে-
আমি তো ঠিকই লিখেছি-
তবে ক্রস দিলো কেন,
সবাই হাসচ্ছে কেন?
ঠিকই তো
এখান থেকেই শুরু হোক বদলে যাওয়ার গল্প-
আজকাল বাবারাও রান্না ঘরে যাচ্ছে,
বাবাদের নিয়মিত রান্না ঘরে যাওয়াটা,
কোন হাসির ঘটনা নয়,
অসম্মানেরও নয়,
লুকিয়ে রাখার ও বিষয় নয়
মায়েদের রান্না করবার মতই সুন্দর সুস্থ ,স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় ঘটনা-
মায়েদের রোজগার করাটাও তাই-
তাই নয় কি?
ছোট্ট শিশুটি যদি বুঝতে শিখেছে,
এত বড় সমাজ এই ছোট্ট কথাটা বুঝবে নাই বা কেন?